Published : 07 May 2025, 04:08 PM
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে শাটডাউন কর্মসূচি শিথিলের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার বিকালে কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সম্পাদক সাব্বির আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে ঘোষিত পলিটেকনিক শাটডাউন কর্মসূচি সাময়িক শিথিল করা হয়েছে।
“বিকাল সাড়ে ৪টায় সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
বুধবার কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের এক বার্তায় বলা হয়, বুধবার ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের উদ্যোগে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে এক গুরুত্বপূর্ণ যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আইডিইবি, পলিটেকনিক শিক্ষক সংগঠন এবং ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ, শিক্ষক এবং প্রতিনিধিরা।
বৈঠকে উপস্থিত সবাই চলমান 'শাটডাউন' কর্মসূচির বিষয়ে সম্মিলিতভাবে মত প্রকাশ করেন এবং শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
“শিক্ষকদের এই সম্মানজনক অনুরোধ এবং কারিগরি শিক্ষার স্বার্থে আন্তরিক উদ্বেগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বুধবার থেকে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি সাময়িকভাবে শিথিল করার ঘোষণা দিচ্ছে।”
তবে ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নে কার্যকর অগ্রগতি না হলে আন্দোলনের পরবর্তী ধাপ আরও শক্তিশালীভাবে ঘোষণা করা হবে বলেও জানিয়েছে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন।
ছয় দফা দাবিতে গত ২৯ এপ্রিল থেকে দেশের বেশিরভাগ পলিটেকনিকে তালা ঝুলিয়ে শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে দুদিন সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ, গণমিছিল এবং সব জেলার ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারস, বাংলাদেশের (আইডিইবি) অফিসে অভিযোগপত্র জমা দেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা।
ছয় দফা পূরণে দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা গত ১৬ এপ্রিল থেকে জোরালো আন্দোলন শুরু করেন। সপ্তাহখানেক ধরে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়নে কমিটি গঠন করলে গত মঙ্গলবার তারা আন্দোলন স্থগিত করেছিলেন।
তবে পরদিনই সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসে তাদের তরফ থেকে।
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়নে গত মঙ্গলবার বিকালে একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে আট সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ।
কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের একজন উপদেষ্টাকেও কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়। ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়ন করে তিন সপ্তাহের মধ্যে বিভাগের সচিবের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয় কমিটিকে।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হল–
>> জুনিয়র ইন্সট্রাকটর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাকটরদের প্রমোশনের হাই কোর্টের রায় বাতিলসহ ক্রাফট ইন্সট্রাকটর পদবি পরিবর্তন এবং ওই মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকে স্থায়ীভাবে চাকুরিচ্যুত করা। ২০২১ সালের বিতর্কিত ক্রাফট ইন্সট্রাকটর নিয়োগের জন্য নিয়োগবিধি অনতিবিলম্বে বাতিল করা, সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে নিয়োগ বাতিল করা এবং মামলার প্রধান কারিগর ক্রাফট ইন্সট্রাকটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
>> ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চার বছর মেয়াদী অব্যাহত রাখা এবং মানসম্মত সিলেবাস ও কারিকুলাম আধুনিক বিশ্বের আদলে প্রণয়ন করা।
>> উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) পদে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাস করা শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কেউ আবেদন করতে পারবে না এবং এই পদ সংরক্ষিত করতে হবে। প্রাইভেট সেক্টরে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা ছাত্রদের ন্যূনতম ১০ম গ্রেডের বেসিক অর্থাৎ ১৬০০০ টাকা দেওয়া।
>> কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিটি প্রকাশ করে কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, উপ-পরিচালক, অধ্যক্ষ ও দায়িত্বে থাকা সকল পদে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবলকে দায়িত্বনিয়োগ দেওয়া।
>> কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিতর্কিত সকল নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন এবং কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল সকল শূন্য পদে পলিটেকনিক ও টিএসসিতে দক্ষ শিক্ষক ও দক্ষ ল্যাব সহকারীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা।
>> ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য আধুনিক বিশ্বের আদলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার গেজেট পাস করতে হবে এবং বর্তমানে প্রস্তাবিত চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও, নড়াইল, খাগড়াছড়ি) শতভাগ সিট নিশ্চিত করা।