Published : 01 May 2025, 12:28 AM
‘ত্রুটির’ কথা বলে গাবতলী গবাদী পশুর হাটের ইজারা দরপত্র বাতিল করায় বড় অঙ্কের সরকারি আয় হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে দূর্নীতি দমন কমিশন-দুদক মনে করছে।
অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার দুদকের একটি দল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন-ডিএনসিসি কার্যালয়ে অভিযান চালায়। সেখানে তারা প্রশাসক ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং নথি সংগ্রহ করেছেন।
দুদকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গাবতলী গরুর হাট ইজারা দরপত্রের ক্ষেত্রে অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি রাজস্বের ক্ষতি করার অভিযোগ পেয়েছে সংস্থাটি।
এতে বলা হয়েছে, দুদকের দলটি জানতে পেরেছে যে ২০২৫ সালের হাট ইজারায় সর্বোচ্চ দর ছিল প্রায় ২২ কোটি টাকা, যা সরকার নির্ধারিত দরের (১৪.৬১ কোটি) চেয়ে অনেক বেশি। মূল্যায়ন কমিটি সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারা দেওয়ার সুপারিশ করলেও তা বাতিল করে খাস আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যুক্তি হিসেবে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) এর (আগের সিপিটিইউ) ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি না দেওয়ার কারণ দেখানো হয়।
তবে হাট ইজারা সরকারি ক্রয় নীতিমালার আওতায় পড়ে না এবং এ ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও নেই বলে বিশেষজ্ঞ মতামত পেয়েছে দুদক।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তেতে বলা হয়, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ইজারা দরপত্র বাতিলের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় এ অভিযোগের বিষয়ে পরবর্তী করণীয় জানতে চেয়ে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করবে অভিযান পরিচালনাকারী দলটি।
এর আগে সংস্থার প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ দরপত্র বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রক্রিয়াগত ভুল থাকার কারণে দরপত্র বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে দরপত্র আহবান করা হবে।”
দুদক অভিযান চালানোর পর রাতে প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমাদের ম্যানুয়ালে পাবলিক প্রকিউমেন্ট অথরিটির ওয়েবসাইটে দরপত্র প্রকাশ করার বিধান রয়েছে। এটা হয়নি। শেষের দিকে এসে আমার চোখে পড়েছে।
“তবে যারা কমিটির দায়িত্বে ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে এখন তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ওয়েবসাইটে এলো না কেন-এ বিষয়গুলোও তদন্তে আসবে।”
এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে খুব শিগগিরই জমা দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
পুনঃদরপত্র বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এজাজ বলেন, “বাতিল হওয়ার পর ডিএনসিসির লোকজনই হাসিল আদায় করছে। তদন্ত হচ্ছে। প্রতিবেদন আসার পর পুনঃদরপত্রের বিষয়টি দেখা হবে।”
এর আগে গাবতলী হাটের ইজারাদার ছিলেন চলচ্চিত্র প্রয়োজক ও অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল। নিয়ম অনুযায়ী বাংলা বছরের শেষ দিন ১৩ এপ্রিল রাতে হাট বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি চিঠি দিয়েছিলেন। যদিও উত্তর সিটি করপোরেশন দাবি করে আগের ইজারদার হাট ‘বুঝিয়ে না দিয়ে’ চলে গেছেন।
নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে সিটি করপোরেশন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হাসিল আদায় করছে।
ঢাকার গবাদী পশুর সবচেয়ে বড় হাট গাবতলী পশুর হাট ইজারা দিতে গত ৩ মার্চ দরপত্র আহবান করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এই দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ১৯ মার্চ এবং ওই দিনই দরপত্র বাক্স খোলা হয়।
গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় ৫ কোটি টাকা বেশি অর্থাৎ ২২ কোটি ২৫ লাখ টাকা দর দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছিল আরাত মটরস নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
অন্যদিকে বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী গত তিন বছরের ইজারার মূল্য গড় করে তার সঙ্গে ৬ শতাংশ বাড়িয়ে নতুন ইজারা মূল্য ১৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৯ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করে ডিএনসিসি। সে অনুযায়ী সর্বোচ্চ দরদাতা আরাত মটরস ৭ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার ৭০০ টাকা বেশী দর দিয়ে দরপত্র দাখিল করে।
নির্ধারিত সময়ে পাঁচটি দরপত্র জমা পড়ে বলে ডিএনসিসি জানায়। আরাত মটরসের পর ২১ কোটি ৬৫ লাখ ৭০ হাজার ৩০০ টাকা দর দিয়ে দ্বিতীয় হয়েছে এস এফ করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তৃতীয় হয়েছে রাইয়ান এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটি ১৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা দর দিয়েছিল। দি সিমেন্ট জয়েন্ট নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান ১৪ কোটি ৬৩ লাখ দর দিয়ে চতুর্থ এবং ১৪ কোটি ৬২ লাখ দর দিয়ে পঞ্চম হয়েছে আবু বকর সিদ্দীক নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠান।
এর মধ্যে দি সিমেন্ট জয়েন্ট ও আবু বকর সিদ্দীক কোনো পে অর্ডার দেয়নি। আর দ্বিতীয় হওয়া এস এফ করপোরেশন যে দুইটি পে অর্ডার দাখিল করে তার মধ্যে ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার পে অর্ডারটি ‘ভুয়া’ প্রমাণিত হয়। এদের দরপত্র বাতিল করা হয়।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গত ৯ এপ্রিল সর্বোচ্চ দরদাতা আরাত মটরসকে কার্যাদেশ দেওয়ার জন্য মতামত দিয়ে প্রশাসকের কাছে নথি পাঠায়। চারদিন পর ১৩ এপ্রিল প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বিপিপিএ ওয়েব সাইটে দরপত্র প্রকাশ না হওয়ার কথা বলে তা বাতিল করে দেন।