Published : 20 May 2025, 05:37 PM
পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহিদ ও ছেলে চৌধুরী রাহিব সাফওয়ান সরাফাতের ১৯টি ফ্ল্যাট, চারটি প্লট, দুইটি বাড়িসহ ৮৫ দশমিক ২৯ শতাংশ জমি জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনে মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য দিয়েছেন।
দুদকের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরাফত পরিবারের সম্পদ জব্দের আবেদনে বলেন, নাফিজ সরাফত ও অন্যদের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা ও নিজেদের একে অপরের যোগসাজশে বিপুল অর্থ আত্মসাতসহ মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে দুদকের ৩ সদস্য অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। তথ্য পর্যালোচনায় বিভিন্ন স্থানে তাদের স্থাবর সম্পত্তির তথ্য পাওয়া গেছে। বর্তমানে তারা পলাতক।
আবেদনে বলা হয়, স্থাবর সম্পত্তিসমূহ দুর্নীতির মাধ্যমে বা বৈধ আয় বহির্ভূতভাবে অর্জন করা হয়েছে মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। অনুসন্ধান শুরুর পর থেকে অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা স্থাবর সম্পত্তিসমূহ অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তার, বন্ধক বা বেহাত করার জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা করছেন মর্মে জানা যায়। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের স্থাবর সম্পত্তিসমূহ অবিলম্বে ক্রোক করা আবশ্যক।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের গত তিন মেয়াদে আর্থিক খাতের অনিয়মে বারবার নাফিজ সরাফাতের নাম এলেও তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী অনেক ব্যবসায়ীর মত নাফিজ সরাফাতের বিষয়েও অনুসন্ধান শুরু করে। তার বিরুদ্ধে তদন্তে নামে অর্থপাচার প্রতিরোধের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
গত অগাস্টেই নাফিজ ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়। এক সময় যাকে স্পর্শ করা যেত না এবং অনিয়মের সংবাদ প্রকাশিত হলে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সাংবাদিকদের ভয়ভীতি দেখানো হত, সেই নাফিজ সরাফাত গা বাঁচাতে পাড়ি জমান বিদেশে।
প্রাথমিকভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যাংক দখল ও শেয়ারবাজার থেকে অর্থ লোপাটের মাধ্যমে ৮৮৭ কোটি টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগের অনুসন্ধানে নামে দুদক। অনুসন্ধানে ৫২টি কোম্পানিতে তার ও তার পরিবারের বিনিয়োগের তথ্য খুঁজে পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর নাফিজ সরাফতের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি নাফিজ সরাফত ও তার পরিবারের বাড়ি, জমি ও ১৮টি ফ্ল্যাট ক্রোকের আদেশ দিয়েছে আদালত।
এরপর ২২ জানুয়ারি নাফিজ সরাফাতের দুবাইয়ে থাকা একটি ফ্ল্যাট ও একটি ভিলা জব্দের আদেশ দেয় আদালত। ১৭ ফেব্রুয়ারি দুদকের আবেদনে নাফিজ সারাফত, স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহিদ ও ছেলে চৌধুরী রাহিব সাফওয়ান সারাফাতের ৭৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেয় আদালত।
২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হলেও সেদিন তিনি দুদকে হাজির হননি। ই-মেইল মারফত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে বিদেশে অবস্থানের তথ্য তিনি জানিয়েছিলেন।