Published : 21 May 2025, 06:23 PM
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের দুই ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) ছাত্র প্রতিনিধি তুহিন ফারাবি ও ডা. মাহমুদুল হাসান একদিন পর দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের ডাকে হাজির হয়েছেন।
তাদের দুজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা পর দুদক মঙ্গলবার তাদের তলব করেছিল। কিন্তু সেদিন হাজির না হয়ে বুধবার তারা দুদকে আসেন।
দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর দল থেকে সাময়িক অব্যাহতিপ্রাপ্ত জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব এ বি এম গাজী সালাউদ্দিন তানভীরকেও একইদিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
দুদকের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “তুহিন ফারাবি ও মাহমুদুল হাসানকে মূলত মঙ্গলবার তলব করা হলেও তারা আজ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হন।
“অন্যদিকে, গাজী সালাউদ্দিন তানভীরকে আজই তলব করা হয়েছিল এবং তিনি সময়মতো উপস্থিত হন।”
২৭ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী দুদকে ডা. মাহমুদুল হাসান ও তুহিন ফারাবি বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্যের অভিযোগ এনে অনুসন্ধানের আবেদন করেন।
তাদের একজন সেদিন বলেছিলেন, “এরা চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাকে অর্থের বিনিময়ে পুনর্বাসনে সহায়তা করেছেন এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ঘুরে ঘুরে তদবির করেছেন বলে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসেছে।”
তুহিন ফারাবিকে ইতোমধ্যে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদের পর বেলা দেড়টার দিকে বেরিয়ে মাহমুদুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন।
মাহমুদুল বলেন, “দুদকের তলব আমি গণমাধ্যম থেকেই জেনেছি, কোনো চিঠি পাইনি। অভিযোগও গণমাধ্যম থেকেই জেনেছি, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।”
তিনি বলেন, “জুলাই আন্দোলনের আহতদের বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর দায়িত্ব পালন করেছি এবং এই কাজ আমি ভবিষ্যতেও চালিয়ে যাবো, পদে থাকি বা না থাকি।”
স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সাবেক পিও তুহিন ফারাবিকেও একইদিনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে তার তরফে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনকে ২২ মে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুদক।
তার বিরুদ্ধেও সে তিন আইনজীবী দুদকে অভিযোগ এনে অনুসন্ধানের আবেদন করেছিলেন।
অভিযোগে বলা হয়, ''মোয়াজ্জেম হোসেন নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রকৌশলীদের বদলি ও নিয়োগের জন্য তদবির বাণিজ্যে জড়িত ছিলেন।
”বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগে ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্যও তদবির করেছেন।”
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তানভীর
চলতি বছরে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পাঠ্যবই ছাপানোর কাগজ কেনায় ‘কমিশন বাণিজ্যের’ অভিযোগ ওঠে গাজী সালাউদ্দিন তানভীরের বিরুদ্ধে।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে তদবির বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে নামে-বেনামে অবৈধ সম্পর্ক অর্জনের অভিযোগে গত ১৫ মে তাকে তলব করে চিঠি দেয় দুদক।
এদিন সকাল ১০টা থেকে সোয়া ১২টা পর্যন্ত দুদক তানভীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
বেরিয়ে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “সব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। আমি চ্যালেঞ্জ করছি—যদি প্রমাণ হয়, আমি জেলে যেতে রাজি।”
তিনি বলেন, “মিডিয়ায় যেভাবে বলা হচ্ছে, ১১০ কোটি টাকার জায়গায় ৪০০ কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে, এটা কীভাবে সম্ভব? এসব অভিযোগের সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত।”
ডিসি নিয়োগ প্রক্রিয়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “ডিসি নিয়োগ; এটা একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়। ডিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে কারও এরকম ভূমিকা থাকে, সে ৬৪ জেলায় ডিসি নিয়োগ করেছে, তাহলে তো মহাশক্তিশালী কাউকে হতে হবে।”
দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর গত ২১ এপ্রিল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীরকে দল থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়।
পুরনো খবর:
স্বাস্থ্য উপদেষ্টার দুই পিও দুদকের ডাকে হাজির হননি
ই উপদেষ্টার সাবেক এপিএস ও পিও'র বিরুদ্ধে দুদকে দুর্নীতির অভিযোগ