Published : 20 May 2025, 10:57 PM
ঢাকার গাবতলী গবাদি পশুর হাটের ইজারা দরপত্র বাতিলের কারণ হিসেবে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি-বিপিপিএ এর ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার ‘বাধ্যবাধকতার’ কথা বলা হলেও তা ‘ঠিক নয়’ বলে মত দিয়েছে বিপিপিএ।
বিপিপিএ বলেছে, পশুর হাট ইজারা সরকারি ক্রয়ের আওতাভুক্ত নয় বলে তাদের ওয়েবসাইটে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রয়োজন নেই।
গত শনিবার দেওয়া এ সংক্রান্ত মতামত জানিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে চিঠি পাঠনো হয়েছে।
বিপিপিএ এর চিঠির বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা একটা মতামত পেয়েছি। সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চিঠি আমরা আজকে (মঙ্গলবার) পেয়েছি, এই চিঠির আলোকে অল্প সময়ের মধ্যে পুনরায় দরপত্র আহবান করে একটি প্রস্তাবনা দিয়ে প্রশাসকের কাছে ফাইল পাঠানো হবে দ্রুত।”
ঢাকা উত্তর সিটি ৭ মে এ সংক্রান্ত মতামত চেয়ে বিপিপিএ’কে চিঠি দেয়। সেই চিঠির জবাবে শনিবার বিপিপিএ মতামত জানিয়ে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে।
সে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬’ এর ২(৩২) ধারা অনুযায়ী পশুর হাটের ইজারা সরকারি ক্রয়ের আওতা বর্হিভূত। ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’ এর ৯০(২)(ঝ) অনুযায়ী তফসিল-২ এ বর্ণিত মূল্যসীমার ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিপিপিএ এর ওয়বসাইটে ক্রয় সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, “যেহেতু পশুর হাট ইজারা প্রদান বিষয়টি সরকারি ক্রয়ের আওতা বর্হিভূত, তাই এ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন বিপিপিএ’র ওয়েবসাইটে প্রকাশের প্রয়োজন নেই।”
১৪৩২ বাংলা সনের জন্য গাবতলী পশুর হাট ইজারা দিতে ৩ মার্চ দরপত্র আহবান করে ঢাকা উত্তর সিটি। এবার ১৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৯ হাজার ৩০০ টাকা ইজারা মূল্য নির্ধারণ করেছিল সংস্থাটি।
ডিপজলের পর গাবতলী হাটের ইজারাদার কে? ঠিক হতে আরো অপেক্ষা
গাবতলী হাট: ইজারা দরপত্র বাতিলে 'অস্বচ্ছতা', আয়ে ঝুঁকি দেখছে দুদক
১৯ মার্চ শেষদিন পর্যন্ত জমা পড়া পাঁচ দরদাতার মধ্যে সর্বোচ্চ ২২ কোটি ২৫ লাখ টাকা দর দিয়েছে আরাত মটরস। ২১ কোটি ৬৫ লাখ ৭০ হাজার ৩০০ টাকার দর দিয়ে দ্বিতীয় হয় এস এফ করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তৃতীয় হয় রাইয়ান এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটি ১৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা দর দিয়েছিল। দি সিমেন্ট জয়েন্ট নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান ১৪ কোটি ৬৩ লাখ দর দিয়ে চতুর্থ এবং ১৪ কোটি ৬২ লাখ দর দিয়ে পঞ্চম হয়েছে আবু বকর সিদ্দীক নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠান।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ৯ এপ্রিল সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারা দেওয়ার সুপারিশ করে প্রশাসকের কাছে নথি পাঠায়। এই কমিটিতে প্রশাসকও রয়েছেন। কিন্তু ১৩ এপ্রিল প্রশাসক সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট, যা বর্তমানে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি-বিপিপিএ এর ওয়েবসাইটে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত না হওয়ার কারণ দেখিয়ে দরপত্র বাতিল করে দেন।
সে সময় প্রশাসক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “নিয়মানুযায়ী হাট বাজারের ক্ষেত্রে কোটি টাকার উপর টেন্ডার হলে সিপিটিইউ’র (বিপিপিএ) ওয়েবসাইটে তা দেওয়ার বিধান রয়েছে। সেটা মানা হয়নি। আরো কিছু অনিয়ম ধরা পড়েছে।”
দরপত্র বাতিল হওয়ার ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকে অভিযোগ গেলে ৩০ এপ্রিল উত্তর সিটি কার্যালয় অভিযান চালায় সংস্থাটি। তারা প্রশাসক ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং নথি সংগ্রহ করেন।
পরে দুদক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, হাট ইজারা সরকারি ক্রয় নীতিমালার আওতায় পড়ে না এবং এ ক্ষেত্রে বিপিপিএ’র ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও নেই বলে বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়েছে।