Published : 11 May 2025, 01:54 AM
জুলাই অভ্যুত্থানের পর বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ডনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফিরে আসার প্রভাব নিয়ে বিস্তর আলোচনার ডালপালা পাশে সরিয়ে দিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এম হুমায়ূন কবির বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নয়ন সহযোগী সব দেশই উদার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখতে চায়।
বাংলাদেশের নতুন রাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতির পটভূমিতে ট্রাম্প প্রশাসনের ভূমিকা নতুন কোনো দৃশ্যের জন্ম দিতে পারে, এমন ধারণা অনেকে করলেও কূটনীতিক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে দায়িত্ব পালন করা হুমায়ূন কবির জোরালোভাবেই দ্বিমত জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমি সেটা মনে করছি না। আমি তো ওয়াশিংটনে অনেকদিন কাজ করেছি। আমার কাছে মনে হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে একটা স্থিতিশীল দেশ হিসেবে দেখতে চায়।
“যে সরকারই থাকুক, বাংলাদেশ যদি স্থিতিশীল থাকে, বাংলাদেশ যদি গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে ধরে রাখতে পারে এবং একটা উদারনৈতিক সমাজ…এটাও মনে রাখতে হবে।
“আমি জোর দিয়ে বলছি, বাংলাদেশকে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, আমাদের অন্য উন্নয়ন সহযোগী যারা আছেন, সকলেই বাংলাদেশে একটা উদার গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবেই দেখতে চায়।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আলোচনা অনুষ্ঠান ‘ইনসাইড আউটে’ অতিথি হয়ে এসেছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির।
পাক-ভারতের সদ্য ‘সমাপ্ত’ সংঘাত, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক, ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপড়েন, মিয়ানমারকে মানবিক করিডোর দেওয়াসহ নানা বিষয়ে নিজের বিশ্লেষণ তিনি আলোচনায় তুলে ধরেছেন।
শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ফেইসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সরকার ‘বড় বিষয় নয়’
প্রবল আন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। তিনদিন পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের হাল ধরে। নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন ডনাল্ড ট্রাম্প।
বাইডেন প্রশাসনের বিদায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবার আওয়ামী লীগের ফিরে আসার সম্ভাবনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়; কারণ দলটির নেতাকর্মীরা তাদের ক্ষমতাচ্যুত করার পেছেনে বাইডেন প্রশাসনে হাত আছে বলে মনে করে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে ট্রাম্পের প্ল্যাকার্ডসহ দলটির কয়েকজন নেতাকর্মীর ধরা পড়ার খবরও দেয় তখন পুলিশ।
দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেয়, যা নিয়ে এখন ঐকমত্যে পৌঁছাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চলছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক হুমায়ূন কবিরের মতে, “প্রফেসর ইউনূস আছেন, তিনি নির্বাচিত কি অনির্বাচিত, তার চাইতে তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) কাছে বড় বিষয় হচ্ছে এই সরকার বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারছে কি না।
“এই সরকার গণতন্ত্রের উত্তরণের জন্য একটা টেকসই বন্দোবস্ত করতে পারছে কি না, সেটাই তারা বিবেচনার মধ্যে রাখছে এবং সেই কারণেই দেখবেন, এই সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি কিন্তু তারা সমর্থন জানাচ্ছে।”
সম্পর্ক হবে ‘নিরপেক্ষ’
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তারপর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে।
ভারত ভিসা সীমিত করে দেওয়ার পর বাংলাদেশ চিকিৎসা সেবা নিতে বিকল্প হিসেবে চীনকে বেছে নেওয়ার কথা বলছে। এছাড়া দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করায় গুরুত্ব দিচ্ছে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নেও সম্মত হয়েছে দেশটি।
ভারত ও চীনের সাথে সম্পর্কের বিষয়ে নিজের মত জানিয়ে হুমায়ূন কবির বলেন, সম্পর্ক হতে হবে ‘প্রয়োজনের’ তাগিদে, সেই সঙ্গে ‘নিরপেক্ষ’।
তিনি বলেন, “আমাদের জাতীয় স্বার্থটা এমনভাবে বিন্যস্ত যে এখানে সকলের সাথে সম্পর্ক রাখা প্রয়োজন। আমরা এই যে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাই, আমরা আমদানি-রপ্তানি করি। এই সবগুলোর সাথে কিন্তু আপনি লক্ষ্য করবেন, চীন ও ভারত ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।”
দুই পক্ষের সাথেই নিরপেক্ষ সম্পর্ক রাখতে হবে, মত দিয়ে এই কূটনীতিক বলেন, “কিন্তু আমরা এটাও জানি ভারত ও চীন পরস্পর পরস্পরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত আছে। তো সেই জায়গাটা আমার দক্ষতার উপর নির্ভর করে বা নির্ভর করবে, আমি চীনের সাথে কীভাবে নির্ভরতামুক্ত সম্পর্ক বজায় রাখবো এবং ভারতের সাথে স্বতন্ত্র সম্পর্ক চালিয়ে যাব।”
বাংলাদেশকে ‘প্রয়োজনীয়তা’ বুঝে ‘নিরপেক্ষ’ সম্পর্ক বজায় রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা কোনো পক্ষেই যাব না। আমরা আমাদের প্রয়োজনের স্বার্থে যার সাথে যেটুকু, যে ধরনের সম্পর্ক রাখা প্রয়োজন, সেটাই আমরা রাখব।
“আমরা এটাও জানি যে, তারা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। কাজেই সেখানে যেহেতু তারা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী, সেখানে আমাকে একটু সাবধানে আমাদের সম্পর্কটা বজায় রাখতে হবে।”
ভারতকে ‘বোঝাতে’ হবে
জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে, তারপরে দেখা যাচ্ছে যে পাকিস্তানের সাথে একটা সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চলছে, ব্যবসা বাণিজ্য বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
সেটি ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের জায়গায় কোনো প্রভাব যাতে না ফেলে যে জন্য ভারতকে ‘বোঝানোর’ কথা বলেছেন হুমায়ূন কবির।
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, “এখন আমাদের দিক থেকে আমরা পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কটাকে গত সাত-আট মাসে স্বাভাবিকীকরণের প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছি। কারণ গত ১৫ বছর পাকিস্তানের সাথে আমাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক ছিল না। কাজেই এরপরে এখন যেহেতু পরিস্থিতিটা একটু ভিন্ন, সেহেতু আমরা স্বাভাবিকীকরণের দিকে যাচ্ছি। এটা আমাদের দিক থেকে আমাদের ধারণা।”
এই বিষয়টিই ভারতকে ‘বোঝাতে’ হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ভারতের সাথেও আবার কূটনীতির এই জায়গাটা, সেটা হচ্ছে ভারতকেও বোঝানো যে আমাদের প্রয়োজন–পাকিস্তানের সাথে আমাদের যে সম্পর্ক, সেটা প্রতিবেশী হিসেবে দুই দেশের যে ধরনের সম্পর্ক থাকা উচিত, সে ধরনের সম্পর্কই আমরা রাখব। পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভারতবিরোধী নয়। অথবা ভারতের সাথে আমার সম্পর্ক পাকিস্তানবিরোধী নয় অথবা চীনবিরোধী নয়।”
সেজন্য কূটনৈতিক দক্ষতা প্রয়োজন বলে মত দিয়ে হুমায়ূন কবির বলেন, “এই জায়গাটাতে আমাদের বন্ধু যারা আছে, যারা আমার সহযোগী আছে, তাদের সকলকে এ বিষয়টা সম্পর্কেও পরিষ্কার ধারণা দেওয়া। এই জায়গাটায় আমাদের কূটনৈতিক পারদর্শিতার বিষয়টা আছে এবং সেখানে আমাদের কূটনৈতিকভাবে অনেক বেশি সক্রিয় ও সক্ষমতা দেখাতে হবে।”
সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘মানুষের প্রত্যাশায়’ গুরুত্ব
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক হুমায়ূন কবির বলেন, “বাংলাদেশের কথাই যদি বলি, বাংলাদেশে এখন একটা ভিন্ন অনুভূতিতে আমরা আছে। জুলাই বিপ্লব বলেন বা গণঅভ্যুত্থান বলেন, তারপরে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস আমাদের মধ্যে এসেছে যে–আমরা পারি। আমরা আত্মসচেতন হয়েছি। কাজেই এই আত্মসচেতনতাটাই আমাদের বাইরের পৃথিবীর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে খানিকটা প্রভাব বিস্তার করছে।”
সমতা এবং সম্মানের ভিত্তিতে সম্পর্ক রাখতে চাওয়ার যে প্রত্যাশা প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ব্যাক্ত করেছেন সেটি মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “সেটা ভারতের সাথেও আমরা চাই। কিন্তু ভারতের দিক থেকে ভারত গত ১৫ বছর যেভাবে বাংলাদেশকে পেয়েছে বা দেখেছে সে জায়গায় একটু ভিন্নতা এখন তাদের কাছে পরিলক্ষিত হচ্ছে।”
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতেও পরিবর্তন দেখছেন এই কূটনীতিক। তিনি বলেন, “আমরা একটু স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করতে আগ্রহী এখন। ভারতের কাছে হয়ত সেটা মনে হয়েছে যে এটা একটু ভিন্নতা। এবং সেই কারণেই এখনো খানিকটা…রাজনৈতিক পর্যায়ে বলব যে, খানিকটা দৃষ্টিভঙ্গিগত ভিন্নতা হয়ত আছে। কিন্তু আবার আপনি যদি লক্ষ্য করেন মৌলিক স্বার্থগুলো, যেগুলো আছে, সেগুলো যে খুব পরিবর্তন হয়েছে তা কিন্তু নয়।”
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা কিন্তু ভারত থেকে এখনো বিদ্যুৎ আমদানি করছি। আমরা এই বছর গত আট-নয় মাসে ভারত থেকে ১৭ শতাংশ বেশি আমদানি করেছি। কারণ, এটা আমার প্রয়োজন। সেই হিসেবে আসছে।
“কাজেই সম্পর্কের বিভিন্ন স্তরে আমাদের দেখতে হবে এবং যেহেতু প্রতিবেশী দেশ, যেহেতু অর্থনৈতিকভাবে কাছাকাছি থাকবার সুযোগ আছে, আমরা চাই বা না চাই, এখানে কিন্তু আপনার সম্পর্ক চালু থাকবে।
“এখন আমাদের জন্য যেটা দায়িত্ব, সেটা ভারত ও বাংলাদেশ দুই দিকের জন্য যে এই চলমান সম্পর্কটাকে আমরা সম্মানজনক এবং সমতার ভিত্তিতে পরিচালনা করি।”
হুমায়ূন কবিরের মতে, এখনকার যে টানাপড়েন, তার নেপথ্যে রয়েছে গত ১৫ বছর ধরে চলে আসা সম্পর্কের ফল, যেখানে বাংলাদেশের মানুষের সম্পৃক্ততা ‘প্রায় ছিল না’ বললেই চলে।
“সেটা সরকারি পর্যায়ে ছিল। যখন সরকার পরিবর্তন হয়েছে, মানুষ সেই জায়গায় থাকেনি। মানুষ তার প্রত্যাশার কথা বলছে। যখন আমি ভারতের সাথে সম্পর্ক পরিচালনা করছি অথবা সেই অর্থে অন্য যেকোনো দেশের সাথে আমি সম্পর্ক পরিচালনা করি, সেটা যখনই মানুষের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে তবেই সেই সম্পর্কটা টেকসই হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।”
ভারতের ‘অসঙ্গতিপূর্ণ’ কূটনীতিক শিষ্টাচার
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে নির্বাচিত সরকার আসার আগে হয়ত এই সম্পর্কটা স্বাভাবিক হবে না। কিন্তু, কূটনৈতিক শিষ্ঠাচার ভিন্ন বলে মনে করেন সাবেক এই রাষ্ট্রদূত।
ভারতেও কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা হুমায়ূন কবির বলেন, “যখন আপনি এরকম উচ্চারণ করেন, তার অর্থ হচ্ছে এখন যারা আছে তাদেরকে আপনি গ্রহণ করছেন না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে যে তারা বাংলাদেশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে এখন।
“কাজেই এই সময়টা বাদ দিয়ে গিয়ে আপনি সামনে যাবেন? এখন নির্বাচন হলে কারা ক্ষমতায় আসবে আপনি জানেন? কাজেই এই কথাগুলো আমার কাছে মনে হয় যে খুব চিন্তাযুক্ত কথা নয়।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষকে আপনি যদি সম্মান করেন, বাংলাদেশের সাথে যদি আপনি সম্মানজনক সম্পর্ক বজায় রাখতে চান, তাহলে যে সরকার আছে তার সাথে আপনি কাজ করবেন।
“আপনার মতের ভিন্নতা থাকতে পারে। কিন্তু সে মতের ভিন্নতা প্রকাশ করেও যে সরকার আছে সেই সরকারের সাথেই আমরা সম্পর্ক বজায় সাধারণভাবে রাখি। ভারতের সরকার পরিবর্তন হয় না? আমরা কী কখনও বলি যে আমরা এই সরকারের সাথে কাজ করব, ওই সরকারের সাথে করব?”
এই কূটনীতিকের মতে, “কূটনৈতিক শিষ্টাচার হচ্ছে, যখনই যে দেশে যে সরকারই থাকে আমরা পছন্দ না করলেও তাদের সাথে আমরা কাজ করি। আমি সেটাই মনে করি, যে ভারতের দিক থেকে যে কথাটা বলা হচ্ছে এ কথাটা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের সাথে খুব সংগতিপূর্ণ বলে আমি মনে করছি না।”
সার্ক পুনরুজ্জীবিত করা ‘কঠিন’
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার যে কথা বলছেন বর্তমান বাস্তবতায় সেটি কঠিন বলে মনে করেন হুমায়ূন কবির।
তিনি বলেন, “উনার ইচ্ছে, উনি বলেছেন কথাটা। আমরাও চাই। সার্কের আইডিয়াও তো বাংলাদেশ থেকে তৈরি হয়েছিল। তো সার্কের প্রতি আমাদের একটা স্বাভাবিক ভালোবাসা যদি বলেন, সেটা আছে। ভারত-পাকিস্তান তো এই সার্কের দুজন সদস্য এবং ভারত পাকিস্তানের সংঘাত এই সার্ককে আজকে যে অবস্থায় আছে, সে দুর্র্গতিতে নেওয়ার জন্য কিন্তু তাদের দুই দেশের এই মতপার্থক্য বা সংঘাতও একটা অন্যতম কারণ।
“আমি আশাবাদী হতে চাই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই মুহূর্তে সার্কের পুনরুজ্জীবন, ভারত-পাকিস্তান যদি সম্পর্ক স্বাভাবিক না হয়, তাহলে এটা একটু কঠিন কাজ হিসেবেই আমি দেখছি।”
রাখাইনে মানবিক করিডোর নিয়ে এখন অনেক আলোচনা চলছে। বিএনপিসহ বেশ কিছু দল এটার তীব্র বিরোধিতা করছে। এবং তাদের সবচেয়ে বড় আপত্তির জায়গা হচ্ছে, এটি কার সাথে আলোচনা করে এই বিষয় নিয়ে কথা বলা হয়েছে?
করিডোর নিয়ে সবার সাথে আলোচনা ‘জরুরি’
রাখাইনে জাতিসংঘের মানবিক করিডোর নিয়ে সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, “এখানে দুই-তিনটা বিষয় আছে। একটা হচ্ছে যে-মিয়ানমারের সাথে আমার প্রধান সম্পর্কের বিষয় হচ্ছে এখন রোহিঙ্গাদেরকে ফেরত পাঠানো। যারা বাংলাদেশ এসেছে, তাদেরকে ফেরত পাঠানো। এটা আমার প্রায়োরিটি নম্বর ওয়ান। এখন এই প্রায়োরিটির সাথে করিডোর বা প্যাসেজ বা চ্যানেল যেটাকে বলা হচ্ছে এর সম্পর্ক কী? ”
এ বিষয়ে হুমায়ূন কবির প্রশ্ন তুলেছেন। তার প্রথম প্রশ্নটি হল, “আমরা যদি চ্যানেল দিতে রাজি হই, আমি তাত্ত্বিকভাবেও বলছি, তাতে কি আমার এই রোহিঙ্গা যাওয়ার ক্ষেত্রে, প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে সরাসরি কোনো ইতিবাচক জায়গা তৈরি হবে?
করিডোর যে জাতিসংঘের প্রস্তাব সে প্রসঙ্গ ধরে দ্বিতীয় প্রশ্ন করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ হিসেবে তো আমাকে এই জাতিসংঘের প্রস্তাবকে আমার বাস্তবতা, আমার প্রয়োজনের নিরিখে আমার নির্ধারণ করতে হবে। আমি কতটা দিতে পারব, কি পারব না।”
করিডোর নিয়ে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি নিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপি যেটা বলছে বা অন্যান্য দল যেটা বলছে, সেটা হচ্ছে এই ধারণাটা নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করা হয় নাই। তার অর্থ কি আলোচনা হলেই তারা রাজি হয়ে যেতেন?
“কাজেই আমার এই জায়গাটায় বিবেচ্য বেশি হচ্ছে যে, আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থটাকে মনে রাখতে হবে। আমাদের কি প্রায়োরিটি সেটাকে মনে রাখতে হবে। তার পরের ধাপে আসবে, সকলের সাথে আলাপ আলোচনা করার জন্য।”
হুমায়ূন কবির বলেন, “যেহেতু এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, সেহেতু সকলের সাথে…শুধু রাজনৈতিক দল না, মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে কি আলাপ আলোচনা হয়েছে? অথবা নাগরিক সমাজে যারা আছে তাদের সাথে কি আলাপ আলোচনা হয়েছে? আমাদের বন্ধুরা যারা আছেন, যেমন চীন ওখানে গুরুত্বপূর্ণ একজন অংশীদার বা ভারত একজন অংশীদার। আমরা কি তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করেছি?
“যেহেতু বিষয়টা বেশ জটিল একটা প্রকল্প বা ধারণা। এটাকে বাস্তবায়ন করতে গেলে আমার অভ্যন্তরীণ সমন্বয় যেমন দরকার, যাতে করে আমি অভ্যন্তরীণভাবে সকলেই সহমতে থাকি, আমার অন্যান্য বন্ধুরা যারা আছে, তাদের সাথেও আলোচনা জরুরি।”