Published : 15 Feb 2025, 05:11 PM
ষোলো বছর আগে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের বিডিআরের পোশাক পরে ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ডে’ অংশ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
এ হত্যাকাণ্ডের ‘মাস্টারমাইন্ড’দের অনেকেই এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে তুলে ধরে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা বলেন, “৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাদের হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের কবর রচনা করে ‘নৈরাজ্যবাদের জন্ম দিয়েছিল’ পতিত আওয়ামী সরকার। ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের বিডিআরের পোশাক পরে পিলখানা হত্যাকান্ডে অংশ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।”
বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “পিলখানা হত্যাকাণ্ডে আমরা জাতির সূর্য সন্তানদের হারিয়েছি। তাদেরকে হারানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের ‘সার্বভৌমত্বের ভিত’কে আঘাত করা হয়েছে।”
বক্তব্যে এ হত্যাকাণ্ডকে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার ‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন তিনি।
অ্যাটর্নি জেনারেলের ভাষ্য, “বাংলাদেশের ওপর আধিপত্যবাদী শক্তির দখলদারিত্ব কায়েমের জন্য, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশই ছিল পিলখানা হত্যাকাণ্ড।”
এটি কোনো বিদ্রোহ ছিল না, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে দেশকে চোরাবালির সন্ধিক্ষণে দাঁড় করানো হয়েছিল।
“একটি রাষ্ট্র বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে বাংলাদেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছিল। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে খুন-গুমের সাথে জড়িত ব্যক্তিকে আশ্রয় দিয়ে সেই রাষ্ট্র বাংলাদেশের মানুষের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিতীয়বার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দুই মাসের মাথায় ঢাকার পিলখানায় দেশের ইতিহাসে কলঙ্কময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। যা ইতিহাসের এক কালো দাগ।
“দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর চরম আঘাত আনার লক্ষ্যে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল। কোনো দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নয়, সেনাবাহিনী যাতে দুর্বল হয়ে যায়, বিডিআর নামে যাতে শক্তিশালী কোন বাহিনী না থাকে, তার জন্যই এই হত্যাকাণ্ড।”
এসময় পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচারের দাবিতে ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান।
তার দাবির মধ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ; তৎকালীন যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, হুইপ মির্জা আজম, ফজলে নূর তাপস, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মেজর জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকসহ সন্দেহভাজনদের ভূমিকা উদ্ঘাটন; ২৫ শে ফেব্রুয়ারিকে শোক দিবস হিসেবে ‘শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
পাশাপাশি বিডিআর হত্যাকাণ্ডে প্রতিবেশী কোনো রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র ছিল কিনা তা অনুসন্ধান করা; অধিকতর তদন্তের স্বার্থে সাবেক সেনাপ্রধানকে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদ এবং হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত না থাকাদেরও চাকুরিতে পুনর্বহাল করাসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হয়।
ছায়া সংসদে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে বিজয়ী হয় তেজগাঁও কলেজের বিতার্কিকরা।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, এস এম মোর্শেদ, ব্যারিস্টার এইচ এম সানজিদ সিদ্দিক, সাংবাদিক মনিরুজ্জামান মিশন এবং সাংবাদিক মো. আতিকুর রহমান।