Published : 26 May 2025, 08:00 PM
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুনের শুরুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার যে আলোচনা শুরু করবে, তার মধ্য দিয়েই ‘জাতীয় সনদ’ তৈরি সম্ভব বলে আশা করছেন কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।
সোমবার সংসদ ভবনের এলডি হলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কমিশনের দায়িত্ব হল রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ কতগুলো সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো এবং একটি ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন করা।
“আমরা আশা করি, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার মধ্য দিয়ে জুলাই মাসের মধ্যেই একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা সম্ভব হবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কোন কোন বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন, সেগুলোর ব্যাপারে এক ধরনের ঐকমত্যে এসে একটা জুলাই সনদ তৈরি করতে পারে, তাহলে সেসময় এই এটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ার প্রশ্নটি আসবে।
“আমরা আশা করি রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু সংস্কার প্রস্তাবের ব্যাপারে অকুণ্ঠ চিত্তে সমর্থন জানিয়েছেন, বারবার জানাচ্ছেন, তাদের যে কমিটমেন্ট সেটা প্রকাশ করছে। আমরা মনে করি যে একটা পথ তারা নির্ধারণ করতে পারবে।”
সংস্কার সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষমতা ঐকমত্য কমিশনের নেই মন্তব্য করে আলী রীয়াজ বলেন, “এটা অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নেবেন। তারা কীভাবে অগ্রসর হবেন এবং আমি যেটা আগে বলেছি রাজনৈতিক দলগুলো আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে কীভাবে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া তৈরি হয়, সেটা হচ্ছে প্রশ্ন। মনে রাখা দরকার যে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াটা আসলে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরাই নির্ধারণ করবে।”
তিনি বলেন, “আমরা মনে করি ৫ অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র, আইন নতুন করে সাজানোর এক ঐতিহাসিক সুযোগ আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে আমাদের ভোটাধিকার ও টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কতগুলো সুদূর প্রসারী সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের পক্ষে জুলাই অভ্যুত্থানের বীর সেনানীদের রক্তের ঋণ স্বীকার করা সম্ভব হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, বিচারপতি এমদাদুল হক, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
গণ আন্দোলনে ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২০২৪ সালের অক্টোবরে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনগুলো ২০২৫ সালে ফেব্রুয়ারিতে তাদের সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করে।
পরে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে সরকার।
বিভিন্ন সংস্কার সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্যে পৌঁছানো ও ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন করা এ ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করা এ কমিশনকে ছয় মাস সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
ঐকমত্য কমিশন ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের প্রিন্ট কপি গত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠায়। এরপর ৫ মার্চ পাঁচটি কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে তাদের মতামতের জন্য পাঠানো হয়। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত সুপারিশ ছিল ৭০টি, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সুপারিশ ছিল ২০টি।
স্প্রেডশিট পাঠানোর পর ১৫ মার্চের মধ্যে মতামত দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ জানায় ঐকমত্য কমিশন। তবে কিছু দল সময় বাড়ানোর অনুরোধ করে। পরে মোট ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছ থেকে মতামত পাওয়া যায়। কিছু কিছু দল স্প্রেডশিটে মতামত দেওয়ার পাশাপাশি বিস্তারিত মন্তব্য ও বিশ্লেষণ জমা দেয়।
মতামত পাওয়ার পাশাপাশি ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার সুবিধার্থে কয়েকটি দলের সঙ্গে একাধিক দিনও বৈঠক চলে। আলোচনার মধ্য দিয়ে বেশ কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য ও আংশিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে আগে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল।
আরও পড়ুন-
ঐকমত্য কমিশনের প্রথম ধাপ: মৌলিক সংস্কার নিয়ে মতপার্থক্য, নীতিগত সায় অনেক বিষয়ে
জুলাই সনদের আলোকে আগামী নির্বাচন: আলী রীয়াজ
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে ভোটের সময়: প্রেস সচিব