Published : 26 May 2025, 10:13 PM
সরকারি চাকরি আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ জারির প্রতিবাদে দিনভর বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীদের বিক্ষোভে কার্যত অচল একটি দিন কাটল প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে।
রাতের মধ্যে ‘ভালো’ কোনো খবর না পেলে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
এমন প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার সচিবালয়ে দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার।
রোববার থেকে শুরু হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন সোমবার দ্বিতীয় দিনেও চলে। সকাল ১১টার দিকে সচিবালয়ের উত্তর প্রান্ত তথ্য মন্ত্রণালয়ের ভবনের দিক থেকে শখানেক মানুষের একটি মিছিল এসে দক্ষিণপ্রান্তে বাদামতলায় জড়ো হয়। সেখানে তারা আধাঘণ্টা ধরে স্লোগান বক্তব্য চালাতে থাকেন।
এই সময় সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি নূরুল ইসলাম ও মহাসচিব মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম জনপ্রশাসন সচিব মোখলেস উর রহমানসহ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া সচিবদের অপসারণের দাবি জানান।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদ সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে জারি করার প্রস্তাবে সায় দেয়।
এর প্রতিবাদে রোববার সকাল থেকে দিনভর সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তাদের আপত্তির মধ্যেই রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে রোববার রাতে অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
কর্মকর্তাদের অনানুগত্য প্রকাশ পেলে, কেউ ছুটি ছাড়া কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকলে, কাউকে কর্তব্যপালনে বাধা দিলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ ঘোষণা করা হয়েছে নতুন অধ্যাদেশে। এই ধরনের অপরাধের জন্য গ্রেড অবনতি, অপসারণ এমনকি বরখাস্তের বিধান রাখা হয়েছে।
অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সাত দিনের নোটিস দেওয়া হবে। জবাব পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে শাস্তি ঘোষণা করা হবে। ৩০ দিনের মধ্যে তিনি রাষ্ট্রপতি বরাবর আপিল করতে পারবেন।
নতুন এই অধ্যাদেশকে আন্দোলনকারীরা বলছেন ‘নিবর্তনমূলক কালো আইন’।
কর্মচারীদের নেতা মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, “জনপ্রশাসন সচিব তাদেরকে অন্ধকারে রেখে নিজে আইন মন্ত্রণালয়ে বসে এমন অধ্যাদেশ প্রস্তুত করেছেন। কয়েকজন উপদেষ্টা আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত তারা অধ্যাদেশ জারি করেই ছেড়েছেন, কথা রাখেননি।”
সারাদিনে যা হলো
সকালে বাদামতলায় বিক্ষোভ দেখানোর পর কর্মচারীদের একটি অংশ সচিবালয়ের প্রধান গেইট (৩ নম্বর গেইট) এক ঘণ্টার বেশি সময় অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ সময় অন্যান্য গেইটগুলোও বন্ধ দেখা গেছে।
বিক্ষোভের কারণে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলসহ অনেকেই ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে ফেরত গেছেন বলে সেখানকার দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন।
বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনের বারান্দায় ঘুরতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা পশ্চিম প্রান্তে নবনির্মিত একটি কমপ্লেক্স ভবনের নিচে অবস্থান নেন। সেখানে কিছুদিন আগে মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় স্থানান্তর হয়েছে।
দুপুর ২টার পরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছিলেন কর্মচারী ইউনিয়নের আরেক অংশের সভাপতি বাদিউল কবীর।
নির্ধারিত সময়ে আইন মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত হলে সেখানকার কর্মকর্তারা জানান, বিক্ষোভের কারণে গেইট বন্ধ ছিল। উপদেষ্টা ঢুকতে না পেরে চলে গেছেন, তাই বৈঠক হবে না।
দুপুরের পর টানা এক ঘণ্টা বৃষ্টির সময়ও কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে বিভিন্ন ভবনের নিচে জটলা করেছিলেন।
যদিও দুপুরে ইউনিয়ন নেতারা দিনের বিক্ষোভ সমাপ্ত করে পরদিন আবারও বিক্ষোভের কর্মসূচি দিয়েছিলেন।
এক পর্যায়ে মিছিল ও ফটক অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে মতোবিরোধ দেখা দেয়। কেউ অবরোধ করতে চাইলেও আরেকটি পক্ষ শান্তিপূর্ণ মিছিল করায় মত দেন।
এই সময় কেউ ‘নাশকতা’ করতে পারে বলে আওয়াজ তোলেন অনেকেই।
সার্বিক বিষয়ে জানতে কয়েকবার জনপ্রশাসন সচিব মোখলেস উর রহমানকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকেও কয়েকবার ফোন করা হলেও তারা কেউ সাড়া দেননি।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও এক কর্মকর্তা জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন।
কর্মচারী নেতা নূরুল ইসলাম রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আলোচনার দরজা খোলা থাকবে। কাল সকাল সাড়ে ১০টায় আমাদের কর্মসূচি আছে। রাতের মধ্যে কোনো ভালো ইঙ্গিত পেলে আমরা কালকে কর্মসূচি করব না। অন্যথায় আমাদের কর্মসূচি চলবে। কেবল সচিবালয় নয়, সারাদেশে সরকারি কর্মচারীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে আগ্রহী।”
এদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যেই মঙ্গলবার সচিবালয়ে দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
“অনিবার্য কারণবশত আগামী ২৭ মে ২০২৫ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে সকল ধরনের দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ থাকবে,” রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
সরকারি চাকরি আইন সংশোধন: সচিবালয়ে দ্বিতীয় দিনের মত বিক্ষোভ
সচিবালয়ে বিক্ষোভ: আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, বললেন স্বরাষ্ট
সচিবালয়ের কর্মচারীরা বললেন, অধ্যাদেশ বাতিল না হলে আন্দোলন চলবেই