Published : 20 May 2025, 09:51 PM
এজলাসের ভিডিও প্রকাশের ঘটনায় বিচারককে ‘আইনের আওতায়’ আনার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বারের একদল আইনজীবী।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঢাকা বার ইউনিটের আহ্বায়ক খোরশেদ আলম বলেছেন, “যে ভিডিও প্রচার করা হয়েছে, সেটা পূর্ণাঙ্গ নয়। এখানে খণ্ডিতাংশ প্রচার করা হয়েছে। বিচারক নিজে বলেন আদালতে মোবাইল বন্ধ রাখতে হবে। অথচ তিনি সেটা ভঙ্গ করে এজলাসের ভিডিও করে তা প্রচার করেছেন।
“এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এ ব্যাপারে ওই বিচারককে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
মঙ্গলবার ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনে ‘সাধারণ সাধারণ আইনজীবীবৃন্দ, ঢাকা বার ইউনিট’ এর ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ‘কুৎসা ও নেতিবাচক প্রচারের’ অভিযোগ তুলে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি খোরশেদ মিয়া আলম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি গোলাম মোস্তফা খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোসলেহ উদ্দিন জসিম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হোসেন আলী খান হাসান সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
খোরশেদ আলম বলেন, “আমরা আইনজীবীরা বার ও বেঞ্চের মাঝে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সচেষ্ট থেকেছি। তবে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন রাজনৈতিক সংগঠনের মত আক্রমণাত্মক বিবৃতি দিয়েছে।
“তারা কোনো ধরনের বিচার বিশ্লেষণ না করেই এবং আমাদেরকে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ না করে একতরফাভাবে বিবৃতি দিয়েছে। এটার কারণে আমাদের সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছে।”
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় হানিফ মেম্বার নামে এক আসামি গত ১২ মে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এরপর গত ১৫ মে তার জামিন চেয়ে আবেদন করেন আইনজীবী। ১৭ মে শুনানি শেষে আসামিকে জামিন না দেওয়ায় বিচারককে ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ তকমা দিয়ে গালিগালাজ করেন কয়েকজন আইনজীবী।
ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে ১৮ মে বিএনপিপন্থি চার আইনজীবীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
তারা হলেন- ফোরামের ঢাকা বার ইউনিটের আহবায়ক খোরশেদ আলম, ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল খালেক মিলন, ফোরামের ঢাকা বার ইউনিটের প্রাথমিক সদস্য অ্যাডভোকেট মো. জাবেদ ও অ্যাডভোকেট এস এম ইলিয়াস হাওলাদার।
এদিকে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সোমবার এক বিবৃতিতে বিচারককে শাসানো আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিন কর্মদিবস সময় বেঁধে দেয়।
ওই সময়ের মধ্যে দোষী আইনজীবীদের সনদ বাতিলসহ তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনানুগ ব্যবস্থা না নিলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের এ সংগঠনের পক্ষ থেকে।
সংগঠনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, “এই ঘটনার মাধ্যমে শুধু একজন বিচারককে অপমান করা হয়নি, বরং গোটা দেশের স্বাধীন বিচার বিভাগের ভিত্তি কেঁপে উঠেছে।
“বিচারকের স্বাধীনতা- নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে, যা একটি সভ্য, গণতান্ত্রিক, আইনশাসিত দেশে কাম্য নয়। এজলাসে অরাজকতা সৃষ্টি, বিচারকের প্রতি হুমকি ও অপমান, বিচারকার্যে অবৈধ বলপ্রয়োগ দণ্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে বলা হয়, “বিচারিক কর্তৃত্বকে পাশ কাটিয়ে পেশী শক্তি ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিজেরপক্ষে আদেশ আদায়ের অপচেষ্টা স্পষ্টভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও শৃঙ্খলার ওপর আঘাত। বিচারককে অপমান করার ঘটনাকে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অপতৎপরতা হিসেবে দেখছে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।”