Published : 06 Jun 2023, 04:49 PM
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে টানা প্রায় চার ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা ২৯ মিনিটে তিনি সেগুনবাগিচার দুদক কার্যালয়ে যান এবং সোয়া ২টার দিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বের হয়ে যান বলে জানান দুদকের সহকারী পরিচালক শফিউল্লাহ।
তিনি বলেন, “বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তাকে দুদকের উপপরিচালক আলী আকবর জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তবে জিজ্ঞাসাবাদে কী তথ্য পাওয়া গেছে, সে ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।”
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জাহাঙ্গীর আলম দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ‘মিথ্যা, ভিত্তিহীন’।
গাজীপুরের এই বরাখাস্ত মেয়রের ভাষ্য, তার বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা তথ্য দিয়ে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা করা হয়েছে, কারা করেছে তার কোনো ‘হদিস নেই’।
দুদকের নোটিস পেয়ে এসেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এর আগেও তাকে ডাকা হয়েছিল। দুদকের প্রতি ‘শ্রদ্ধা জানিয়ে’ তিনি এসেছেন।
“৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের গল্পের নাটক সাজানো হয়েছিল। যেখানে ৬ থেকে সাড়ে ৬ শ কোটি টাকা প্রজেক্টে সরকার বরাদ্দ দিয়েছে, আর প্রজেক্টের সব কাজ চলমান রয়েছে, সে জায়গায় কাগজের মধ্যে অভিযোগ করা হল সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ।”
এসব অভিযোগ কে বা কারা করেছে, সেসব তথ্য ‘নেই’ দাবি করে জাহাঙ্গীর বলেন, দুদক এসব বিষয় নিয়ে তার সাথে কথা বলেছে এবং ‘সহযোগিতা’ করেছে।
“এসব বিষয়ে আমি লিখিত জবাব দিয়েছি এবং আমার নামে ভুয়া স্বাক্ষর দিয়ে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয় জানতে পেরে তার বিচারও চেয়ে বলেছি আমার সব স্বাক্ষর যাচাই বাছাই করা হোক এবং প্রয়োজনে ফরেনসিক পরীক্ষা করে বের করা হোক কে অ্যাকাউন্টি খুলেছে।”
তিন বছর মেয়রের দায়িত্ব পালনের কথা তুলে ধরে জাহাঙ্গীর বলেন, “গাজীপুরের মানুষ জানে তাদের জন্য কি করা হয়েছে। আর এজন্যই আমার মাকে নির্বাচিত করেছে। দুদক যা যা জানতে চেয়েছে তার শতভাগ প্রমাণ এবং স্বচ্ছতার সাথে উত্তর দিয়েছি।”
জাহাঙ্গীর গাজীপুরের মেয়র পদ থেকে বাদ পড়ার সাত মাস পর ২০২২ সালের জুনে তার বিরুদ্ধে এই অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুদক। সে সময় বলা হয়েছিল, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অনিয়মের মাধ্যমে তিনি ‘কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ’ করে সিটি করপোরেশনের নামে ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ‘লেনদেন করেছেন’ বলে অভিযোগ রয়েছে দুদকের হাতে।
ওই ভুয়া অ্যাকাউন্টে ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে সিটি করপোরেশনের নামে কয়েক কোটি টাকা জমা এবং উত্তোলন করে জাহাঙ্গীর আলম ‘আত্মসাৎ করেছেন’ বলে অভিযোগ করা হয়েছে সেখানে।
২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরশেন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে ২০২১ সালের নভেম্বরে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে মেয়র পদ থেকেও তাকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
এবারের সিটি নির্বাচনের আগে জাহাঙ্গীরকে ক্ষমা করলেও তাকে আর মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন দেওয়া হয় আজমত উল্লা খানকে। জাহাঙ্গীর তখন ফের বিদ্রোহ করে বসেন এবং নিজের ও মায়ের নামে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
কিন্তু ঋণ খেলাপির অভিযোগে জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। আওয়ামী লীগও তাকে ফের বহিষ্কার করে। শেষ পর্যন্ত মা জায়েদা খাতুনকে ভোটের লড়াইয়ে জেতাতে উদ্যোগী হন সাবেক মেয়র, আর সেই বাজি তিনি জিতেও যান। আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন জায়েদা খাতুন।