Published : 26 May 2025, 06:29 PM
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা বন্দর নির্মাণের সময় ‘উচ্ছেদ হওয়া’ ছ-আনিপাড়ার ছয়টি রাখাইন পরিবারকে ‘উপযুক্ত স্থানে’ পুনর্বাসনের দাবিতে আলোচনা সভা হয়েছে।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে 'উচ্ছেদকৃত ৬টি রাখাইন পরিবার ও নাগরিক উদ্যোগ' শীর্ষক এ সভা আয়োজন করা হয়।
‘উচ্ছেদের শিকার’ রাখাইন পরিবারের সদস্য চিং ধামো রাখাইন বলেন, "পায়রা বন্দর নির্মাণের জন্য আমাদের ২৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বসতভিটা কোনো আলোচনা ছাড়াই অধিগ্রহণ করা হয়। অধিগ্রহণের পর গাছপালা ও বসতবাড়ির ক্ষতিপূরণ হিসেবে আমরা কিছু টাকা পেয়েছি। কিন্তু ভোগদখলকৃত জমির ক্ষতিপূরণ এখনও পায়নি।"
মানবাধিকার কর্মী দীপায়ন খীসার সঞ্চালনায় আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।
আলোচনায় এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, "বাংলাদেশে যে ভূমি অধিগ্রহণ আইন রয়েছে, সেটি আসলে সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি। অধিগ্রহণের বিপরীতে যে ক্ষতিপূরণটুকু পাওয়ার কথা, তা মেলে না।"
সভায় প্রধান উপদেষ্টা উদ্দেশ করে বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, "ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্টার লিংককে লাইসেন্স দিয়ে দিল, গ্রামীণ ব্যাংককে ট্যাক্স ফ্রি করে দিল।
“আপনি এত কিছু দিয়ে দিলেন, কিন্তু এই ছয় রাখাইন পরিবারকে শেখ হাসিনার বস্তিতে রাখতে চাইছেন কেন?”
নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন বলেন, "যারা ভূমির মালিক, তাদেরকে নিজ ভূমি থেকে তাড়িয়ে বস্তিতে থাকতে বাধ্য করার যে কার্যক্রম, তা সত্যিই অমানবিক। এসব প্রবণতার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হবে।
"এই রাখাইনদের উচ্ছেদ করে যে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আবাসন তৈরি করা হয়েছে, তারা আসলে সেখানে থাকেও না। তাদের পরিবার থাকে ঢাকা শহরে।”
তিনি বলেন, “এমন একটা সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে যে, সরকারি কর্মকর্তা হলেই তার জন্য জমি, প্লট, ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিতে হবে। এসব প্রবণতার বিরুদ্ধে আমাদের কথা বলতে হবে।"
আলোচনায় আরো অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কোষাধ্যক্ষ মেইনথিন প্রমীলা ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম বরিশাল অঞ্চলের সভাপতি মংচোথিন তালুকদার।
রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, "আমরা সত্যিকার বাঘ তাড়িয়ে দিয়ে সিমেন্টের বাঘ তৈরি করি। আর এই আদিবাসীদের তাড়িয়ে দিয়ে আমরা জাদুঘর নির্মাণ করি। ষাটের দশকে সেখানে ষাট হাজার রাখাইন বসবাস করত। এখন তাদের সংখ্যা হাতেগোনা। আশা করি, তাদেরকে যে অসম্মান করা হচ্ছে, সেটা অনতিবিলম্বে বন্ধ হবে।"
আয়োজকরা জানান, সভার পর ছ-আনিপাড়ার ছয় রাখাইন পরিবার নৌপরিবহন উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি দেবে।