Published : 15 Aug 2024, 09:29 PM
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার শোকাবহ দিন ঘিরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শোক জানাতে যাওয়া ব্যক্তিদের ফোন চেক ও তাদের মারধর করার ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করে এমন কাজ থেকে আন্দোলনকারীদের বিরত থাকার আহ্বান রেখেছেন সমন্বয়করা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রিফাত রশিদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ বিষয়ে কথা বলেছেন।
শোক দিবস ঘিরে আন্দোলনকারী, ছাত্র সংগঠন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত এবং আওয়ামী লীগের অবস্থানের কারণে দেশজুড়ে উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে।
১৫ আগস্ট শোক দিবসের সাধারণ ছুটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাতিল করা ও ৩৪ ছাত্র সংগঠনের শোক দিবস পালন না করার সিদ্ধান্তের বিপরীতে আওয়ামী লীগ দিবসটি পালনের ঘোষণা দেয়। দেশ ছেড়ে ভারতে অবস্থান নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি পালনের আহ্বান রাখেন।
তবে বুধবার বিকালে শাহবাগ মোড়ে এক জমায়েতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতারা হুঁশিয়ার করে বলেন, ১৫ অগাস্ট ঘিরে ‘প্রতিবিপ্লবের’ চেষ্টা করা হলে তাদের মাটিতে ‘পিষে ফেলা হবে’, ‘পা ভেঙে দেওয়া হবে’।
এর মধ্যে বুধবার সন্ধ্যায় ৩২ নম্বরে শোক জানাতে যাওয়া একদল মানুষের ওপর হামলা চালায় আন্দোলনকারীরা। রাতে সেখানে অবস্থান নিয়ে ‘হিন্দি গান’ বাজিয়ে উল্লাস করার খবর আসে।
সকালে ৩২ নম্বরে যাওয়া ব্যক্তিরা হামলা ও হেনস্তার শিকার হয়। শোক জানাতে যাওয়া অনেককে আটকে রাখে আন্দোলনকারীরা। পরে সেনাবাহিনী গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।
এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা দেখা যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বিকালে উপদেষ্টা নাহিদ তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, কারও ফোন চেক করা, নিরস্ত্র-নিরপরাধ ব্যক্তির ওপর চড়াও হওয়া নিন্দনীয়। একইভাবে গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের মিডিয়ায় বাজেভাবে উপস্থাপন ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’। অপরাধীদের আইনের প্রক্রিয়া অনুসারে বিচার করতে হবে।
“আমাদের অভ্যুত্থান ন্যায় ও নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ, জীবনের নিরাপত্তা ও সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা আমাদের ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের লক্ষ্য। আমাদের যেমন প্রতিরোধ জারি রাখতে হবে, অন্যদিকে নিজেদের অভ্যুত্থানের স্পিরিট বজায় রাখতে হবে।”
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যাওয়া ব্যক্তিদের ফোন চেক করে পরিচয় শনাক্ত করা এবং তাদের অনেকে হেনস্তা করার ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার পর বিবৃতি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রিফাত রশিদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আজকের ‘সর্বাত্মক অবস্থান’ কর্মসূচিতে বিভিন্ন জায়গায় মানুষের ফোন চেক করে হেনস্তা করার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
১৫ অগাস্ট ঘিরে আওয়ামী লীগ যেন ঢাকায় অবস্থান নিতে না পারে বা প্রতিবিপ্লবের মতো কিছু ঘটাতে না পারে, সেজন্য বৃহস্পতিবার ‘সর্বাত্মক অবস্থান’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
রিফাত রশিদ বলেছেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন স্পষ্ট করে বলতে চায়, মানুষের প্রাইভেসি বিনষ্ট হয় এমন কোনো কিছুই আমরা সমর্থন করি না। এমন কাজ পুরোনো বৈষম্যের দৃষ্টান্তকেই আবার নতুনভাবে ডেকে আনছে। তাই ফোন চেকসহ নাগরিকের ব্যক্তিজীবনের স্বাভাবিক যাত্রা বিনষ্ট হয় এমন কিছুই করবেন না।"
‘মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের স্বাধীনতা’ নিশ্চিত করা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনের পথে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ বর্ণনা করে রিফাত রশিদ বলেন, “তাই সকলকে আহ্বান করা যাচ্ছে, সারা দেশে ষড়যন্ত্রকারীদের রুখে দিতে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিন এবং স্বাভাবিক জনজীবন যাতে আরও সুন্দর ও সুশৃঙ্খল হয়, তা নিশ্চিতে রাজপথে থাকুন “
আরও পড়ুন
আন্দোলনকারীদের দখলে ধানমন্ডি ৩২: শ্রদ্ধা জানাতে বাধা, মারধর
৩২ নম্বর: হামলায় আহতদের উদ্ধার করে নিয়ে গেল সেনাবাহিনীর গাড়ি