Published : 25 May 2025, 11:20 PM
দিনভর সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন-বিক্ষোভের মধ্যেই রাতে সরকারি চাকরি আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার; যাতে সরকারি কর্মচারীদের কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, আনুগত্যহীনতা, বিশৃঙ্খলার মত ঘটনায় বরখাস্তের মত শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
রোববার রাতে ’সরকারি চাকরি আইন-২০১৮’ এর সংশোধন করে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদ সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে জারি করার প্রস্তাবে সায় দেয়। রোববার সকাল থেকে দিনভর সচিবালয়ে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা সেখানে মিছিলও করেন।
নতুন অধ্যাদেশের মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সহজেই শাস্তি, এমনকি চাকরি থেকে বরখাস্ত করার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে বলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে।
আর এ আইন করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সরকার প্রয়োজন মনে করছে বলেই এ আইন করছে।
সচিবালয়ে বিক্ষোভ: আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
এরমধ্যেই রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাতে তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়।
এতে পুরোনো আইনের সঙ্গে ’৩৭ক’ নামের আরেকটি ধারা সংযোজন করা হয়।
নতুন ধারায় একজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে দুই দফায় সাত দিন করে নোটিসের পর দায়ী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা রাখার বিধান রাখা হয়েছে।
অধ্যাদেশে ‘আচরণ বা দণ্ড সংক্রান্ত’ বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে-
>> কেউ যদি এমন কাজ করে যা অনানুগত্যের সামিল এবং যা অন্য কর্মচারীদের মাঝে অনানুগত্য সৃষ্টি করতে পারে বা শৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটাতে পারে বা অন্যের কর্তব্য পালনে বাধার সৃষ্টি করতে পারে;
>> এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে ছুটি ব্যতীত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে। কাউকে কর্মবিরতিতে বাধ্য বা উস্কানি দেওয়া, অন্য কর্মচারীকে কাজে বাধা দেওয়া হলে;
>> কোনো কর্মচারীকে তার কর্মস্থলে আসতে বা কাজ করতে বাধা দেওয়া হলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হবে।
এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে পদাবনতি বা গ্রেড অবনতি, চাকরি থেকে অপসারণ কিংবা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিধান রাখা হয়েছে।
সচিবালয়ের কর্মচারীরা বললেন, অধ্যাদেশ বাতিল না হলে আন্দোলন চলবেই
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভ
এসব অসদাচরণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ গঠন, সাত দিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারণ জানিয়ে জবাব না দিলে আবার সাত দিনের নোটিস দেওয়ার পর তা বিবেচনা করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।
তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর আপিল রাখার সুযোগ রয়েছে। দণ্ডের নোটিস হাতে পাওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করা যাবে।
দিনভর আন্দোলন
এদিন ‘বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের’ ব্যানারে সকাল ৯টা থেকে আন্দোলনে নামেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
তারা সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সামনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়ো হতে থাকেন। এক এক পর্যায়ে মিছিল নিয়ে তারা সচিবালয়ের ভেতরেও ঘুরে আসেন।
শনিবার বিশেষ কর্মদিবসেও বিক্ষোভ করেছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মাঝে দুপুরে নামাজের জন্য মিছিল থামানো হলেও পরে বিভিন্ন দপ্তরে জটলা করেছেন কর্মচারীরা।
এরপর আড়াইটার দিকে গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে বৈঠক করেন সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের নেতা বাদিউল কবীর, নিজাম উদ্দিন আহমেদ মো. নূরুল ইসলাম ও মো. মুজাহিদুল ইসলামসহ একটি দল। এ সময় সেখানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনও ছিলেন।
কর্মচারী ইউনিয়ন নেতা বাদিউল কবীর বলেন, “নিবর্তনমূলক অধ্যাদেশে মানবাধিকার পরিপন্থি ধারা সংযুক্ত করা হচ্ছে। উপদেষ্টাগণ আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা তবুও আন্দোলন চালিয়ে যাব, শান্তিপূর্ণভাবে।"
আন্দোলনকারীদের কয়েকজন বলছেন, সংশোধিত আইনে কর্মচারীদের ‘অধিকার খর্ব করা হবে’। তারা বলছেন, এই আইনে সরকার চাইলে যে কোনো শাস্তি দিতে পারবে, বদলি করতে পারবে। ২০তম গ্রেড থেকে শুরু করে প্রথম শ্রেণির পর্যন্ত সব কর্মচারীদের ক্ষেত্রে এই আইন প্রযোজ্য।
তবে ননক্যাডার কর্মচারীরা ‘বেশি ভুক্তভোগী হবে’ বলে শঙ্কা তাদের।
কর্মকর্তাদের এমন আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “নির্বাচনকে ম্যানুপুলেট করার জন্য ২০১৮ সালে সরকারি কর্মচারী আইনকে সংশোধন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এখন সরকার প্রয়োজন মনে করছে বলে পুনরায় এই আইনের সংশোধন করছে। তবে, কর্মচারীদের এই বিষয়ে কিছু বলার থাকলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
অভিযোগ শুনতে কমিটি
এদিকে কর্মচারীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের অভিযোগ শোনার জন্য পুরোনো একটি কমিটি পুনর্গঠন করে রোববারই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি করে গঠন করা এই কমিটিতে সদস্য আছেন নয়জন। সদস্য হিসেবে রয়েছেন চারজন যুগ্ম সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব, অর্থ বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব।
এই কমিটি সরকারি কর্মচারীদের যৌক্তিক দাবিদাবা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত ও সুপারিশ তৈরি করবে। কমিটি প্রতিমাসে একবার সভায় মিলিত হবে এবং প্রয়োজনে উপযুক্ত সংখ্যক প্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময় করতে পারবে। কমিটি প্রয়োজনে আরও সদস্য নিতে পারবে।