Published : 18 May 2025, 07:41 PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপির গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তবে গত পাঁচদিনেও হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ধরা পড়েনি অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা উপদেষ্টার আশ্বাসে ‘পুরোপুরি’ সন্তুষ্ট হতে পারেননি।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের নেতৃত্বে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে যায়।
দলে আরও ছিলেন শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম।
উপদেষ্টা এই মামলার তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।
সাক্ষাতের পর অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, মূলত সাম্য হত্যার বিচারের বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা হয়েছে।
“আমরা চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটা সুন্দরভাবে সম্পূর্ণ হবে। উপদেষ্টা কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। নোট নিয়েছেন। উনি বলেছেন, চেষ্টা করছেন এবং এটা এগিয়ে নিয়ে যাবেন।”
এরপরেই শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য বলা হলে সাম্যর বন্ধু পরিচয় দিয়ে নাহিন ইসলাম বলেন, “আপনারা জানেন, আমরা শাহবাগ থানাকে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়েছিলাম। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, আশানুরূপ অগ্রগতি দেখবো। কিছু অগ্রগতি ছিল, তবে সেটা আশানুরূপ না।”
পাঁচ দিন পরেও সাম্য হত্যার মূল হোতা বা যে গ্রুপটা ছিল তাদের ধরা হয়নি বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন তিনি।
মামলাটি ডিবির কাছে হস্তান্তর ও আইন মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ ট্রাইবুন্যালে বিচারের ব্যবস্থা করার আশ্বাস পাওয়ার বিষয়ে নাহিন বলেন, “আমরা কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছি কিন্তু এখনও পুরোপুরি হতে পারিনি। আমরা তখনই আশ্বস্ত হব, যখন এই হত্যার মূল হোতাদের থানায় ও বিচারের আওতায় এসেছে দেখবো।
“তবে এ মুহূর্তে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার যে সদিচ্ছা দেখতে পাচ্ছি সেটা থেকে আমরা প্রত্যাশা করতে পারি সাম্যের যারা খুনি তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার হবে এবং বিচারের আওতায় আসবে।”
আন্দোলনের কর্মসূচির ব্যাপারে পরবর্তীতে সবার সঙ্গে কথা বলে ক্যাম্পাস থেকে নির্ধারণ করার কথা বলেন তিনি।
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে নাহিন বলেন, “আপনারা জানেন ক্যাম্পাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল ও রাজনৈতিক দল বিভিন্নভাবে এটার সুযোগ নেওয়ার পাশাপাশি তারা তাদের দাবি দাওয়া জানাচ্ছে। কোন দাবি নৈতিক বা অনৈতিক, সেটা বলার আমি কেউ না।
“বারবার বলে আসছি, আমরা একটা দাবি নিয়ে আসছি। সেটা হলো সাম্যের বিচার। সেটার জন্য আমাদের যেটা করা প্রয়োজন আমরা সেভাবেই এগিয়ে যাব। সেক্ষেত্রে বাকিদের সঙ্গে কথা বলে আমরা সিদ্ধান্ত নেব আরো কঠোর হব কিনা।”
‘আল্টিমেটাম’ থেকে সরে যাওয়া বা না যাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এই শিক্ষার্থী বলেন, “আল্টিমেটাম থেকে সরে যাওয়া না। আল্টিমেটাম ছিল আমরা যাতে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে পারি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, যেহেতু ডিবির কাছে হস্তান্তর হচ্ছে তাই আমরা আশাবাদী ইতিবাচক কিছু দেখতে পাব।”
মঙ্গলবার রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খুন হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক সাম্য। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন।
বুধবার সাম্য হত্যার ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে তাদেরকে ‘বহিরাগত’ বলছে পুলিশ।
শুক্রবার অন্য খুনিদের গ্রেপ্তারে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এর অন্যথা হলে ‘শাহবাগ থানা ঘেরাও করা হবে’ বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। এ ছাড়া অহিংস আন্দোলন অন্য রূপ নেবে বলেও হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন তারা।