Published : 14 Jun 2025, 12:20 PM
সংঘর্ষের জেরে একটানা ১৭ দিন বন্ধ থাকার পর ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল শনিবার পুরোদমে চালু হয়েছে।
এদিন সকাল থেকে রোগী ভর্তি যেমন শুরু হয়েছে, তেমনই বহির্বিভাগে রোগী দেখা, অস্ত্রোপচারসহ অন্যান্য কার্যক্রমও চলছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের দুটি ফটকের একটি বন্ধ। ফটকে পুলিশ, র্যাব, আনসার ও হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন। এর পাশে পকেট গেইট দিয়ে রোগী ও স্বজনরা প্রবেশ করছেন।
দীর্ঘদিন বন্ধের পর হাসপাতাল চালু হওয়ায় বহির্বিভাগে রোগীর চাপ দেখা গেছে।
ঢাকার ডেমরা থেকে আসা জুয়েল বর্মণ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার স্ত্রীর চোখের অস্ত্রোপচার পরবর্তী দেখানোর সময় ছিল গত বৃহস্পতিবার। তবে বন্ধ থাকায় আসতে পারেননি।
“ডাক্তার বলছিল এক মাস পরে আসতে। আইসা দেখি মেডিকেল বন্ধ। সেদিন খবরে দেখলাম আজ ডাক্তাররা আসবেন। এজন্য আমার স্ত্রীকে নিয়ে এসেছি।”
স্ত্রীর চোখের ছানি কাটার জন্য স্ত্রীকে গাজীপুরের ভোগড়া এলাকা থেকে এসেছেন বাদশা মিয়া নামে একজন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমাদের ডেট ছিল আরও আগে। হাসপাতাল বন্ধ থাকায় তা হয়নি। আইসা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।
“আজ সবকিছু স্বাভাবিক। আমাদের যা পরীক্ষা ছিল তা করিয়েছি। আগামী ১৮ তারিখ অপারেশন হবে।”
কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে আসা আশরাফুল ইসলাম নামে একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত বুধবার এসে ফিরে গিয়েছিলেন তিনি। শনিবার আবার এসেছেন।
“আজকে এসে ভালোই সেবা পেলাম আরকি। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল। এভাবে বন্ধ রাখলে জনগণের অসুবিধা হয়, আসতে যেতে সমস্যা হয়। আমি আগেও এসেছিলাম, বন্ধ থাকায় হয়রানি হয়েছে। আজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে ১৬ তারিখে ভর্তি দিয়েছে।”
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের সব সেবা পুরোপুরি চালু হয়েছে। কোনো সেবা বন্ধ নাই। স্বাভাবিক নিয়মে যেভাবে চলার কথা সেভাবেই চলছে।
“তবে এখন পর্যন্ত যে সমস্যা হচ্ছে- আমরা পেশেন্টকে দেওয়ার জন্য বেড রেডি করতে গেলে সেখানে থাকা চার-পাঁচজন হাসপাতালের নার্সদের বাধা দিচ্ছে।”
গত ২৮ মে হাসপাতালের কর্মচারীরা কর্মবিরতি শুরু করলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় সেখানে চিকিৎসাধীন জুলাইযোদ্ধা এবং চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা। এরপর থেকে নিরাপত্তার দাবিতে হাসপাতালে আসা বন্ধ রাখেন চিকিৎসক, কর্মচারীরা।
এরপর ৪ জুন জরুরি বিভাগ এবং ১২ জুন বহির্বিভাগ চালু হয়। তার একদিন বাদে পুরোদমে চালু হলো চক্ষু চিকিৎসায় দেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল।
ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ৫৪ জন ছিলেন। তাদের মধ্যে ৫০ জন রিলিজ না নিয়েই চলে গেছে। তাদের না পাওয়ায় আমরা তাদের অনুপস্থিত দেখাচ্ছি। বাকিদের মধ্যে চারজন হাসপাতালে আছে, তাদের মধ্যে তিনজনের ডিসচার্জ আমরা রেডি করে রেখেছি।
“তারা বাড়িতে থেকেই প্রয়োজনে ফলোআপে আসতে পারেন। আরেকজন আছেন এখনও ছুটি দেওয়ার মত অবস্থায় নাই। আরেকজন ভর্তি ছাড়াই এখানে অবস্থান করছে।”
জানে আলম বলেন, হাসপাতালে এখন চারজন আছেন। এছাড়া বাইরে যারা ছিলেন শনিবার তাদের একটা অংশ হাসপাতালের বাইরে অবস্থান করছেন। এ কারণে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এখনও পুরোপুরো নিরাপদ বোধ করছেন না।
“আমরা এখনও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছি। কারণ তারা বাইরে অবস্থান করছে। ভেতরের স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা দিচ্ছে।”
হাসপাতালের সামনের সড়কে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের কয়েকজনকে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
তাদের একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদের ছুটির সময় বাড়িতে গিয়েছিলাম। আজ এসে দেখি পুলিশ। আমাদের ঢুকতে দিচ্ছে না।
“অথচ আমার চোখের অবস্থা খারাপ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছোট একটা বিষয়কে জটিল করেছে। আমাদের সবাইকে ভিলেন বানিয়েছে।”