Published : 17 Jul 2024, 06:11 PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে ছাত্রদের হল ছাড়ার নির্দেশের মধ্যে সেখানে শিক্ষার্থীদের সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে কয়েক দফায় ছত্রভঙ্গ করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবারের সংঘাতে দেশে নিহতদের স্মরণে গায়েবানা জানাজায় বাধার মধ্যেও উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এই আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেয় কয়েকশ শিক্ষার্থী।
এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রতীকী কফিন ধরে শপথ করেন। তারা সমস্বরে বলেন, "এই আন্দোলন আমরা বৃথা যেতে দেব না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই আন্দোলন থেকে সরে যাব না।"
বুধবার বিকাল পৌনে ৩টায় কোটা আন্দোলনকারীরা নিহতদের স্মরণে বিভিন্ন হল থেকে কয়েকটি কফিন নিয়ে আসে।
পুলিশের ব্যারিকেড উপেক্ষা করে উপাচার্যের বাড়ির সামনে গায়েবানা জানাজা পড়ে।
পরে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে আন্দোনকারীরা টিএসসিতে যাওয়ার চেষ্টা করে। টিএসসির কাছে গুরুদুয়ারা নানকশাহীর সামনে গিয়ে তারা পুলিশকে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে। খালি কফিনগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
এ সময় কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ।
পরে বিকেল ৫ টার দিকে আন্দোলনকারীর ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, “পুলিশ ক্যাম্পাসের প্রত্যেকটি প্রবেশ পথে শিক্ষার্থীদের আটকে দিয়েছে। ক্যাম্পাসের ভেতরের শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।”
শিগগিরই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
বুধবার দুপুরের পর এই জানাজার ঘোষণা ছিল সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য পাদদেশে। কিন্তু সেখানে শিক্ষার্থীদের জড়ো হতে দেয়নি পুলিশ। সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
সেখান থেকে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সভাপতি আখতার হোসেনকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়।
পরে আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন এবং সেখানেই জানাজা পড়ার ঘোষণা দেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে সোমবার হঠাৎ করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ বাঁধে।
পরের দিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় হয় সংঘাত সহিংসতা।
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষে ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যু হয়।
চট্টগ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হয় তিন জন, যাদের মধ্যে একজন দোকান কর্মচারী, একজন ছাত্রদল নেতা এবং অপরজন ছাত্র।
ঢাকায় সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় নিহত দুই জনের একজন ফুটপাতের দোকানি ও অপরজন ছাত্রলীগ কর্মী সবুজ আলী।
এর প্রতিক্রিয়ায় প্রথমে সব স্কুল কলেজ ও পরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ আসে।
শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে থাকলেও বিকালের পর থেকে অনেকেই হল ছেড়ে যেতে থাকে।
বিকাল ৫টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ টিএসসি এলাকায় গিয়ে জানান, পুলিশ হল খালি করার অনুমতি পেয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হল না ছাড়লে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ রয়েছে।
ডিবি প্রধান বলেন, “জানমালের ক্ষতি করলে তা দমন করা ছাড়া পুলের সামনে আর কী যুক্তি থাকতে পারে?
“এ সময়ে হল খালি না হয় তাহলে আমরা খালি করব। কেউ যদি জোর করে থাকতে চায়, আমরা তাদের ছাড় দেব না।”