Published : 16 Jul 2024, 02:11 PM
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননার’ অভিযোগ তুলে তাদের শাস্তি দাবি করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, “কোটা পদ্ধতি কোনোভাবেই বাতিল নয়, বরং যৌক্তিক সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু এ আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থীরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে অপমান অপদস্ত করছে।
“শুধু তাই নয়, রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নিজেদের রাজাকার দাবি করার যে উদগ্র বাসনার কুৎসিত বহিঃপ্রকাশ দেখিয়েছে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে।”
২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা দুই সপ্তাহ ধরে টানা আন্দোলন চালিয়ে আসছে।
এর মধ্যে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি আদালতেই ফয়সালা করতে হবে।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে সরকারপ্রধান বলেন, “কোটা আন্দোলন করার আগে তো তাদের রেজাল্টগুলো দেখা উচিত ছিল যে- কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে! দ্বিতীয়টি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি পুতিরা (চাকরি) পাবে?
“মুক্তিযোদ্ধাদের অপরাধটা কী? নিজের জীবন বাজি রেখে, নিজের পরিবার সংসার সব বাদ দিয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, খেয়ে না খেয়ে, কাদা মাটিতে রোদ বৃষ্টি ঝড় সব উপেক্ষা করে যুদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন করেছে। মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় এনে দিয়েছিল বলেই সবাই উচ্চপদে আসীন, আজকে বড় গলায় কথা বলতে পারছে। নইলে পাকিস্তানিদের বুটের লাথি খেয়ে মরতে হত।”
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে ‘মর্মাহত’ হয়ে রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষালয়ে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ দেখান; যেখানে স্লোগান দেওয়া হয়, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার-রাজাকার; কে বলেছে কে বলেছ, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’।
শিক্ষার্থীদের এমন স্লোগান নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা মধ্যে সোমবার দফায় দফায় সংঘাত হয়েছে, আহত হয়েছেন প্রায় তিনশ জন। এ ঘটনায় মঙ্গলবারও সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
নাগরিকের সুযোগসুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমতার জন্য বিভিন্ন দেশেই কোটা পদ্ধতি চালু আছে জানিয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বলছে, “সেক্ষেত্রে কোন যুক্তিতে আন্দোলনকারীরা কোটাপদ্ধতি ‘বাতিলের দাবি’ জানাচ্ছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। তবে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি মনে করে, অন্যান্য দেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বর্তমান বাস্তবতার নিরিখে কোটাপদ্ধতি সংস্কার করা যেতে পারে, কিন্তু কোনোভাবেই বাতিল করা যাবে না।”
বিবৃতিতে শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শাহরিয়ার কবির, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, শামসুল হুদা, মমতাজউদ্দিন আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক অনুপম সেন, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, শিল্পী হাশেম খান ও রফিকুন নবী বিবৃতিতে সই করেন।