Published : 07 Apr 2025, 09:02 PM
পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার চর্চা ‘বাঙালি সংস্কৃতির অংশ নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
জাটকা সংরক্ষণে এদিন পান্তা-ইলিশ খাওয়া বন্ধের অনুরোধ করে তিনি বলেছেন, “পহেলা বৈশাখে ইলিশ খায় কেমন করে, পহেলা বৈশাখে তো ইলিশ পাওয়ার কথা না। আসলে পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ আমাদের সংস্কৃতির অংশ না। তবুও ঢাকায় এটা চালু হয়েছিল।
“মনে রাখতে হবে যে, পহেলা বৈশাখে যারা ইলিশ খাবেন তারা জাটকাই খাবেন এবং তারা আইনের লঙ্ঘন করছেন। বাজারে পাওয়া যাওয়াটাও কিন্তু আইনের লঙ্ঘন হবে। এই সময়টাতে জাটকার বিষয়টা জোরালো করার জন্যই এটা (ক্যাম্পেইন) করছি।”
সরকার ৮ থেকে ১৪ এপ্রিল জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ঘোষণা করেছে। সোমবার সচিবালয়ে ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২৫’ ঘোষণা করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা।
১৪ এপ্রিল পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ হলেও গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সেদিনই সারা দেশে উদযাপন করা হয় পহেলা বৈশাখ। এদিন পান্তার সঙ্গে ইলিশ খাওয়ার রীতি চলে আসছে অনেক বছর ধরে। ফলে পহেলা বৈশাখের আগ দিয়ে ইলিশের দামও হয়ে যায় চড়া।
তবে এবার বৈশাখ উদযাপনে পান্তা-ইলিশের না খাওয়ার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এ সময়টাতে জাটকা সংরক্ষণে গুরুত্ব দেওয়া ও সচেতনতা বৃদ্ধির কথা বলেন।
তিনি বলেন, “আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই যে, পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশ আমাদের সংস্কৃতির অংশ না। বিশেষ করে এপ্রিল মাসে। অন্য সময় খেলে সেটা আমাদের কোনো ব্যাপার না। এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখে পান্তার সঙ্গে যে ইলিশ খাওয়া হয়, সেটা যেন না খাওয়া হয়। কারণ এটা ইলিশ না, এটা জাটকা।
“জাটকাকে সংরক্ষণ করে আমরা যেন ইলিশে রূপান্তর করতে পারি, সেজন্য এই দিন ইলিশ না খেতে আমি অনুরোধ করব।”
জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ
‘জাটকা ধরা বন্ধ হলে, ইলিশ উঠবে জাল ভরে’ প্রতিপাদ্যে এবার জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ পালিত হবে। বরিশালের বেলস্ পার্কে ৮ এপ্রিল এই সপ্তাহের উদ্বোধন করা হবে। এদিন ডিসি ঘাট সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীতে হবে নৌ র্যালি।
প্রজনন মওসুম বিবেচনায় বর্তমানে সমুদ্রে মাছ শিকার বন্ধ রয়েছে। গত ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই নিষেধাজ্ঞা চলবে ১১ জুন পর্যন্ত। নিষেধাজ্ঞা চলার সময়ে জাটকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সপ্তাহব্যাপী প্রচার চালাবে সরকার।
জাটকা হচ্ছে ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের ছোট আকারের ইলিশ। এক কেজি ওজনের ইলিশ কমপক্ষে ৪০-৫০ সেন্টিমিটার এবং ২ কেজির অধিক হলে ৬০-৬২ সেন্টিমিটার হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, “যদি জাটকা সংরক্ষণ করা যায়, তাহলে ইলিশের উৎপাদন অনেক গুণে বাড়বে। উৎপাদন বাড়লে বাজারেও এর প্রভাব পড়বে, সরবরাহ বাড়বে, দামও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
“সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ইলিশ পৌঁছে দিতে অন্তর্বর্তী সরকার কার্যকর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তার ধারাবাহিকতায় জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ পালন করা হবে।”
জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ঘোষণার ওই অনুষ্ঠানে বলা হয়, গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে দেশে ৫ লাখ ২৯ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। দেশের মোট মাছ উৎপাদনে ইলিশের অবদান প্রায় ১১ শতাংশ। দেশজ জিডিপিতে ইলিশের অবদান ১ শতাংশের বেশি। বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি আহরিত হয় এ দেশের নদ-নদী, মোহনা ও সাগর থেকে। ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষ স্থানে রয়েছে।
জাটকা রক্ষায় সবার সহযোগিতা কামনা করে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, “ইলিশ ধরা বন্ধ থাকলেও উৎসব থেমে থাকবে না, বরং আমাদের ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় সচেতনতার এই সুযোগটাও বড় উৎসবের অংশ হতে পারে।”