Published : 03 Jun 2025, 05:25 PM
চুয়াল্লিশ থেকে আটচল্লিশতম বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে যে জট সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনের ‘রোডম্যাপ’ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন-পিএসসি।
কমিশন বলছে, আগামী ৩০ জুন ৪৪তম বিসিএস, ২২ সেপ্টেম্বর ৪৮তম বিশেষ বিসিএস এবং ১০ ডিসেম্বর ৪৫তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে।
আর ১৯ জুন ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ, ২৮ সেপ্টেম্বর ৪৭ তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ এবং ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কমিশন।
মঙ্গলবার কমিশনের পক্ষ থেকে এ রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে বলে পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মতিউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
তার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যাদের একই সঙ্গে ৪৫তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা ও ৪৬তম বিসিএসের লিখিত বা ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা থাকবে, তাদের ওই পরীক্ষার এক মাস আগে বা এক মাস পর ৪৫তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। কোনো প্রার্থীর দুটি পরীক্ষা যেন ওভারল্যাপিং না হয়, সেই লক্ষ্যে কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দেশে সরকারি চিকিৎসক সংকটের কারণে ৪৮তম বিশেষ বিসিএসকে কমিশন সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৭ মে বিশেষ বিসিএসের গেজেট প্রকাশিত হওয়ার পরপরই কালক্ষেপণ না করে ২৯ মে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের এমসিকিউ টাইপ লিখিত পরীক্ষা ১৮ জুলাই হবে। ফলাফল ২১ জুলাই প্রকাশ করা হবে এবং চূড়ান্ত ফলাফল ২২ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হবে।
৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ১৯ সেপ্টেম্বর এবং লিখিত পরীক্ষা ২৭ নভেম্বর থেকে শুরু হবে জানিয়ে কমিশন বলেছে, নিয়মিত বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি জারির দুই মাস পর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা এবং প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দুই মাস পর লিখিত পরীক্ষা হবে।
তবে 'অনিবার্য কারণে’ এসব তারিখ কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কমিশন তা বাস্তবায়নের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।
আর আগামী ১ নভেম্বর ৪৯তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি জারি এবং ওইদিন থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছে কমিশন।
২০২১ সালে আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা এক দফায় শুরু হলেও গত ১৮ নভেম্বর তা বাতিল ঘোষণা করে পিএসসি। পরে গত ২২ ডিসেম্বর থেকে ফের পরীক্ষাটি শুরু হয়।
প্রথম দফায় মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ৮ মে। মাঝে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে তা প্রথম দফায় এবং সরকার পতনের পর ওই বছর ২৫ অগাস্ট দ্বিতীয় দফায় তা স্থগিত করা হয়।
আগে ৩ হাজার ৯৩০ জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। এতে মোট ১১ হাজার ৭৩২ জনের অংশ নেওয়ার কথা ছিল। ‘ন্যায্যতা বজায় রাখতে প্রার্থীদের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে’ এ পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।
৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর প্রকাশ করেছিল পিএসসি। ২০২৩ সালের ১৯ মে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়। ২ লাখ ৬৮ হাজার ১১৯ জন প্রার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। ওই বছরের ৬ জুন প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১২ হাজার ৭৮৯ জন লিখিত পরীক্ষায় বসেন গত বছর ২৩ জানুয়ারি, যা শেষ হয় ৩১ জানুয়ারি। লিখিত পরীক্ষার ফল এখনও প্রকাশিত হয়নি। পিএসসি গত নভেম্বরে জানিয়েছে, কমিশন সব উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি, যার প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয় ২০২৪ সালের ২৬ এপ্রিল। প্রিলিমিনারিতে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৫৬১ প্রার্থী অংশ নিয়েছিলেন। ওই বছর ৯ মে প্রিলিমিনারি প্রকাশিত ফলে উত্তীর্ণ হন ১০ হাজার ৬৩৮ জন।
গত বছরের ২৮ অগাস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর অস্থির সময়ের কারণে ২৫ অগাস্ট তা স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
‘বৈষম্য দূরীকরণে’ প্রথম দফায় প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণদের সঙ্গে আরও সমান সংখ্যক প্রার্থীকে উত্তীর্ণ করে ফের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে বলে গত ১৮ নভেম্বর ঘোষণা দেয় পিএসসি।
পরে গত ২৭ নভেম্বর আগে উত্তীর্ণ ১০ হাজার ৬৩৮ জনের সঙ্গে আরও ১০ হাজার ৭৫৯ প্রার্থীকে উত্তীর্ণ করে ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল ফের প্রকাশ করেছে পিএসসি।
৩ হাজার ৪৮৭টি ক্যাডার এবং ২০১টি নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দিতে গত ২৮ নভেম্বর ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি জারি করে পিএসসি। এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হবে ৮ অগাস্ট।
গত ১০ ডিসেম্বর সকালে ১০টা থেকে অনলাইনে এ বিসিএসের আবেদনগ্রহণ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ৯ ডিসেম্বর তা স্থগিত করে পিএসসি।
পরে গত ২৬ ডিসেম্বর ৪৭তম বিসিএসের সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে, ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষা থেকে আবেদন ফি ও মৌখিক পরীক্ষার (ভাইভা) নম্বর কমানো হয়।
এ বিসিএসে মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ২০০ থেকে কমিয়ে ১০০ করা হয়েছে। ফলে মোট নম্বর ১১০০ থেকে কমে ১০০০ হয়েছে।
এ বিসিএসে প্রথমবারের মতো আবেদনের বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করা হয়। ২৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় এ বিসিএসের আবেদন, চলে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।