Published : 19 May 2025, 08:00 PM
মালয়েশিয়া শ্রমবাজারের সিন্ডিকেট নিয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে মারামারিতে জড়িয়েছে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটি এজেন্সির (বায়রা) দুই পক্ষ।
সোমবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ওই সংবাদ সম্মেলনে ডাকা হয়েছিল। দুই পক্ষের মারামারির সময় সংবাদিকদের এই সংগঠনের কার্যালয়ও ভাঙচুরের শিকার হয়।
পরে অবশ্য দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে মিটমাট করে আলাদাভাবে সংবাদ সম্মেলন করে।
সংবাদ সম্মেলন ডাকা পক্ষটি মালয়েশিয়া শ্রমবাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে চায়। তাদের দাবি, শ্রমবাজার উন্মুক্ত করে দিয়ে সরকারের বিএমইটির ডেটাবেইজ সমৃদ্ধ করে কর্মী পাঠাতে হবে। এতে অভিবাসন ব্যয় অনেক কমবে।
আর অপর পক্ষটি বলছে, যারা এখন সিন্ডিকেট ভাঙার কথা বলছে, অতীতে তারাই সিন্ডিকেটর অংশ হয়ে প্রচুর অর্থ হাতিয়েছে।
এখন তাদের এসব কর্মকাণ্ডের ফলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যেতে পারে শঙ্কা প্রকাশ করে এই পক্ষটির দাবি, মালয়েশিয়া সরকারের নীতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে সেদেশে কর্মী পাঠাতে হবে।
২০২১ সালে একটি সমঝোতা চুক্তির আওতায় ১০২টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ শুরু হয়। ২০২৪ সাল থেকে মালয়েশিয়ার জনশক্তির বাজার আবারও বন্ধ হয়ে যায়।
এরমধ্যেই গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসে, আগামী কয়েক মাসে মালয়েশিয়া এক থেকে দেড় লাখ বিদেশি জনশক্তি নেওয়ার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার আশ্বাস মিলেছে।
বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার পুত্রাজায়ায় দেশটির তিনজন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে বিকালে নিজের ফেইসবুক পেইজে এক ভিডিও বার্তায় এমনটাই বলেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
এর আগে থেকেই অবশ্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের সিন্ডিকেট ভাঙা নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে বায়রার একটি পক্ষ।
এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়াজ উল ইসলামদের নেতৃত্বাধীন একটি পক্ষ।
সেই সংবাদ সম্মেলনে ঢোকা নিয়ে সংগঠনের আরেকটি পক্ষের লোকজন হট্টগোল শুরু করেন। দুই পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডাও শুরু হয়। এ সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকা ফখরুল ইসলামের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন কিছু সদস্য। এক পর্যায়ে তারা ফখরুলকে কিল-ঘুষি দেওয়া শুরু করলে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়।
প্রাণ বাঁচাতে সাগর-রুনি মিলনায়তন থেকে ফখরুল পাশের ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্র্যাব) অফিসে আশ্রয় নেন। সেখানেও তার পেছনে ধাওয়া করে ছোটেন কয়েকজন। পুলিশ আসার পর অন্যরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। এসময় ডিআরইউর স্থাপনা ও আসবাবপত্র নষ্ট করেন দুই পক্ষের লোকজন।
ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল বলেন, “আমাদের হল ভাড়া নিয়েছিল ফখরুল সাহেবদের গ্রুপটি, যারা সিন্ডিকেটবিরোধী। কিন্তু তারা যেন এখানে ঢুকতে না পারে সেজন্য অন্য একটা গ্রুপ এসে সকাল থেকেই চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে তারা হামলা করে। ডিআরইউর ইতিহাসে কখনো এমন হয়নি। আমাদের চারতলায় ভাঙচুরও হয়েছে। পরবর্তীতে তাদের দুই পক্ষের মিউচুয়াল হয়েছে। তারা ক্ষতিপুরণও দিয়ে গেছে।”
পণ্ড হওয়া সংবাদ সম্মেলনটি পরে দুপুর ২টার দিকে শুরু হয়।
সেখানে বায়রার একাংশের নেতা ফখরুল ইসলাম বলেন, “সিন্ডিকেট হওয়ার আগে অভিবাসন কস্ট বেশি ছিল না। ২০০৬-০৭ সালের দিকে মাত্র এক থেকে দেড় লাখ টাকায় মালয়েশিয়ায় কর্মী গেছে। গত ২০২০-২২ সালের দিকে যখন সিন্ডিকেট হয়েছে তখন কিন্তু এই খরচটা বাড়ছে। এই সিন্ডিকেটকেই তো কর্মীপ্রতি অতিরিক্ত দেড় লাখ টাকা করে দিতে হচ্ছে, ফলে খরচতো বাড়বেই।
“আমরা মনে করছি, সকল রিক্রুটিং এজেন্সিকে যদি উম্মুক্ত করা হয় সেই ক্ষেত্রে সরকার একটা ম্যাকানিজম করতে পারে। সেটা হলো বিএমআইটির যে ডেটাবেইজ আছে সেটাকে কাজে লাগাতে পারে। ডেটাবেইজটাকে অ্যাকটিভ করে মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক যত কর্মী আছে তারা সেখানে রেজিস্ট্রেশন করবেন। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো ডেটাবেইজ থেকে কর্মী নেবে। তখন মাত্র এক থেকে দেড় লাখ টাকা মধ্যে এই খরচ মেটানো সম্ভব।”
মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুকরা সেই টাকা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দিতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, “টাকাটা তারা মেডিকেল হওয়ার সময়, ভিসা হওয়ার পরে এবং যাওয়ার সময় আরেকটা অ্যাকাউন্টে দেবে। এভাবে তিন কিস্তিতে তারা টাকা দিয়ে যেতে পারে। এভাবে করলে কর্মীরা কোনো দালালের হাত ধরে আসবে না, সিন্ডিকেটও হবে না, বাড়তি টাকাও গুনতে হবে না। ব্যয় তখন কমে যাবে।”
সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের অনেকেই এই সিন্ডিকেটে যুক্ত ছিলেন উল্লেখ করে সিন্ডিকেটকে স্পষ্টভাবে ‘না’ বলার জন্যও উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে অনুরোধ করেন বায়রা নেতা ফখরুল।
ওই পক্ষের সংবাদ সম্মেলন শেষে ডিআরইউর শফিকুর কবীর মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে অপর পক্ষটি।
সেখানে তাদের অন্যতম নেতা ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা আতিকুর রহমান বলেন, “আমরা বায়রার সাধারণ সদস্য হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে গিয়েছিলাম, কিন্তু তারা আমাদের বের করে দিয়েছে। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, পরে মিটমাট হয়ে গেছে।”
এক প্রশ্নে আতিকুর বলেন, “যারা আজকের সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল তারা ভারতের স্বার্থকে হাসিল করতে চায়, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারকে বন্ধ করতে চায়।”
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বায়রা নেতা ফখরুল এতদিন সিন্ডিকেটের অন্তর্ভুক্ত থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছেন। এখন তারা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটা বন্ধ করতে চান।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এইসব কুচক্রীদের কথা না শুনে মালয়েশিয়া সরকারের নীতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে সেদেশে কর্মী পাঠাতে হবে। না হলে মালয়েশিয়া সরকার অন্যান্য দেশ থেকে প্রয়োজনীয় কর্মী নিয়ে নেবে।