Published : 25 May 2025, 12:53 PM
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের শপথ পড়িয়ে তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে কর্মসূচি পালন করছে ডিএসসিসির কর্মচারী ইউনিয়ন।
ইশরাককে মেয়েরের চেয়ারে না বসিয়ে ‘বাড়ি ফিরবেন না’ বলে জানিয়েছেন তার সমর্থকরা।
ইশরাক সমর্থক ও কর্মচারী ইউনিয়নের টানা ১২ দিনের এই কর্মসূচির কারণে ১০ দিন ধরে সিটি করপোরেশনের সব ধরনের কার্যক্রম কার্যত বন্ধ আছে।
রোববার সকাল ১০টার পর থেকে নগর ভবন প্রাঙ্গনে জড়ো হতে থাকেন কর্মচারীরা। তারা সে সময় ইশরাককে মেয়রদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে স্লোগান ধরেন। আন্দোরনকারীদের ভাষ্য, ‘মেয়র ছাড়া নগর ভবন চলতে পারে না’।
মুনীর হোসেন নামে একজন বলেন, “আমরা চাই ইশরাক হোসেনের শপথ অনুষ্ঠান করে তাকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হোক। ইশরাক হোসেন মেয়রের চেয়ারে বসলেই আমরা বাড়ি ফিরব। এর আগে আন্দোলন চলবে।”
শ্রমিক-কর্মচারীদের কর্মসূচির কারণে নগরবাসী সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন কী না, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আন্দোলনকারীদের মধ্যে আবদুল কাইয়ুম নামের একজন বলেছেন তাদের আন্দোলনের কারণে ‘মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে না’।
আরও পড়ুন:
ইশরাক কেন 'এক সপ্তাহের জন্য' মেয়রের দায়িত্ব নিতে চান?
ফের নগর ভবন অবরোধ ইশরাক সমর্থকদের
“যারা নিয়ম অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালন করছে না, ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়াচ্ছে না। তাদের কারণেই আন্দোলন, তারাই এর জন্য দায়ী।”
ডিএসসিসির কর্মচারী আফরোজা হক বলেন, “আদালত থেকে যে রায় এসেছে সেই রায়ের বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা তাকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে চাচ্ছি, এটা শুধু আমাদের চাওয়া না। এটা ঢাকাবাসীর সবার চাওয়া। সরকার শপথ পড়ালেই আমরা কাজে ফিরব।”
রোববারও নগর ভবনের নিচতলার মূল প্রবেশপথসহ অন্য প্রবেশপথগুলোয় তালা দেওয়া দেখা গেছে। নগর ভবনের মূল ফটকেও ঝুরছে তালা। পাশের পকেট গেইট নিয়ে মানুষজন ভেতরে যেতে পারছেন। তবে ফিরে যাচ্ছেন সেবা প্রার্থীরা।
নগর ভবনে ডিএসসিসির অঞ্চল-১ এবং অঞ্চল-৪ এর কার্যালয়। কর্মসূচির কারণে অন্য কার্যালয়গুলোর মত ওই দুইপি কার্যালয়েও সেবা বন্ধ।
ঢাকার ওয়ারী থেকে আসা সালাহ উদ্দিন নামে একজন বলেন, “মেয়ের জন্ম নিবন্ধনের একটু সংশোধন করা দরকার ছিল। গত কয়েকদিন ধরে ঘুরছি। অফিসই খুলছে না। কাজটাও করতে পারছি না।”
বৃহস্পতিবার ইশরাককে মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে করা রিট মামলা খারিজ করে দেওয়ার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কী উদ্যোগ নেয় তা পর্যবেক্ষণের জন্য ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে সেদিন আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিলেন ইশরাক।
সে সময় শেষ হওয়ার পর ইশরাকের সমর্থকরা শনিবার আবার নগর ভবনে অবস্থান নেন।
এর আগে গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে ইশরাক সমর্থক ও বিএনপি নেতাকর্মীরা।
আরও পড়ুন:
আন্দোলন ৪৮ ঘণ্টার জন্য স্থগিত ঘোষণা ইশরাকের
রিট মামলা খারিজ, ইশরাকের শপথ নিতে 'বাধা নেই'
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।
এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয় সেজন্য গত ১৪ মে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ।
এমন পরিস্থিতিতে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গত সপ্তাহের বুধবার থেকে আন্দোলন নামেন ইশরাক সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনের কারণে ডিএসসিসি নগর ভবন কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
কিন্তু আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এক ফেইসবুক পোস্টে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করেন ইশরাক। তার সমর্থকরাও একই দাবি তোলেন।
আরও পড়ুন:
মৎস্যভবন মোড়ে ইশরাক সমর্থকদের উল্লাস, দুই উপদেষ্টার বিদায় চেয়ে স্লোগান
নেতাকর্মীদের রাজপথ না ছাড়ার নির্দেশ ইশরাকের
ইশরাকের মেয়র পদ নিয়ে রিট মামলার আদেশ পিছিয়ে বৃহস্পতিবার