Published : 13 May 2025, 07:21 PM
রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিলের হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর আপিলের ওপর বুধবার পরবর্তী শুনানি হবে।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হয়।
জামায়াতের পক্ষে এহসান আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে তৌহিদুল ইসলাম শুনানি করেন।
শুনানি শেষে জামায়াতের কৌঁসুলি মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, “যে প্রক্রিয়ায় হাই কোর্ট নিবন্ধন বাতিল করেছে সেটি মূলত ইসির সামনে বিচারাধীন ছিল। ইসির কাছে বিবেচনাধীন কোনো বিষয় আদালত এইভাবে বাতিল করতে পারে না। এটা ছিল প্রিম্যাচিউর।”
দলটির প্রতীক নিয়ে তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামীর দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ছিল। এটা আজ থেকে না, দলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি ছিল। সংসদীয় নির্বাচনে এ প্রতীক নিয়ে অংশ নিয়েছিল দলটি।
“কিন্তু হঠাৎ ফুলকোর্ট সভার এক সিদ্ধান্তের কারণে এ প্রতীক ব্যবহার না করার নির্দেশ দেওয়া হয়।”
শিশির মনির বলেন, “আমরা বলেছি ভারতীয় উপমহাদেশে আদালত কর্তৃক নিবন্ধন বাতিল করার নজির নেই। এটিই প্রথম।”
ইসির আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “জামায়াতের নিবন্ধন আবেদন যাচাই-বাছাই করেছিলাম, তখন হাইকোর্ট হস্তক্ষেপ করায় পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারিনি। এখন আমরা আপিল বিভাগের রায়ের অপেক্ষায় আছি। আপিল বিভাগে যে রায় হবে সেটাই বাস্তবায়ন করবো।”
তিনি বলেন, ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় সিদ্ধান্ত হয়, দাঁড়িপাল্লা প্রতীক, সেটা সুপ্রিম কোর্টের প্রতীক। সেটা অন্য কাউকে বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। সিদ্ধান্তটা নির্বাচন কমিশনকে পাঠানো হয়। তখন দাঁড়িপাল্লা প্রতীকটা প্রতীকের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এখন জামায়াতে ইসলামী বিষয়টা সামনে এনেছেন।
তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “এটা যেহেতু ফুলকোর্টের সিদ্ধান্ত ছিল। আপিল বিভাগ বলছে-এই মামলায় ফুলকোর্টের সিদ্ধান্তে হাত দিতে পারবো না।”
জামায়াতকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে তরীকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে একটি রিট আবেদন করেন।
২০১৩ সালের ১ অগাস্ট বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের বেঞ্চ ওই রিটের রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে।
ওই রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন ওই বছরের ৫ অগাস্ট খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। তাতে এ দলটির দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে। শুনানিতে জামায়াতের মূল আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারকের আপিল বেঞ্চ ওই আপিল খারিজ করে দেয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তনের হাওয়ায় সেই আপিল পুনরুজ্জীবনের আবেদন করা হয় জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে।
তাতে সম্মতি দিয়ে গতবছর ২৪ অগাস্ট আপিলটি পুনরুজ্জীবিত করার আদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। তাতে নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতে ইসলামীর আইনি লড়াইয়ের পথ খোলে।
জামায়াতের কৌঁসুলি শিশির মনিরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৭ মে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ মঙ্গলবার শুনানির দিন ঠিক করে দেয়।
তিনি বলেছিলেন, “জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের কারণে গণতন্ত্রে উত্তোরণে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।”
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতার অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জাময়াতের আবেদনে সেই নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেওয়া হয়।
এবার নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ফিরে পেলে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকারও ফিরে পাবে ২০০১-০৬ সময়ে বিএনপির সঙ্গে সরকারে থাকা দলটি।