Published : 05 Jun 2025, 12:25 AM
নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের গেজেট প্রকাশের মাধ্যমেই নিজেদের কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কমিশন বলেছে, যেহেতু গেজেট বহাল রয়েছে, শপথের বিষয়টি স্থানীয় সরকারের। সেক্ষেত্রে নতুন কোনো পদক্ষেপ ইসির নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
আপিল বিভাগের রায়ের কপি পাওয়ার পর বুধবার কমিশন সভায় এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের রায় ও অন্যান্য বিষয় পর্যালোচনা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয় নোটিফিকেশনের মাধ্যমে তথা তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে এবং সম্পন্ন হয় গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে। আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব সম্পন্ন করেছে এবং গেজেট বহাল আছে। তাই আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশনের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।”
শপথের বিষয়টি সরকারের হওয়ায় ইসি আর কোনো আইনি পদক্ষেপ বা মন্ত্রণালয়ে কোনো ধরনের চিঠি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই বলে মনে করে কমিশন।
সমাধান এখন কি? এমন প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে বলতে পারি, নির্বাচন কমিশনের কাজ হচ্ছে গেজেট পর্যন্ত প্রকাশ করা আর শপথের ব্যাপারটি স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন আইনে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, কারা এটা পরিচালনা করবে।
“আমরা যেটা বলেছি, আমাদের চিঠির মাধ্যমে এখানে যদি আইনি কোনো ধরনের জটিলতা না থাকে বা অপরাপর কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকে তাহলে আমরা তাদের পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেছি।”
ইশরাক হোসেনের শপথ আটকাতে আপিল বিভাগে যে আবেদন করা হয়েছিল, ২৯ মে তা পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৭ বিচারকের আপিল বেঞ্চ যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে তাতে এই জটিলতায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, নির্বাচন কমিশন এক্ষেত্রে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি।
রোববার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন জানায় তারা আদালয়ের রায়ের কপি হাতে পেয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সোমবার বৈঠক করার কথা থাকলেও হয়নি।
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে এক যুগ আগে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে রোববার সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখন নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীকের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
বুধবার বিকালে ষষ্ঠ কমিশন সভায় ইশরাক ও জামায়াতের নিবন্ধন বিষয়ে আদালতের রায়ের কপি পর্যালোচনা করে তা নিষ্পত্তি করা হয়। জামায়াত দাঁড়ি-পাল্লা প্রতীকসহ নিবন্ধন ফেরত পাচ্ছে।
ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
২৭ এপ্রিল কমিশন ইশরাকের গেজেট প্রকাশের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয় চিঠিও পাঠায়।
সেই গেজেট এখনও বহাল থাকার কথা তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, “এখন আর কোনো (স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে) চিঠি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি না।”
প্রেক্ষাপট
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সবশেষ নির্বাচন হয়। তাতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।
এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয় সেজন্য গত ১৪ মে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ।
অন্যদিকে ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে ওইদিনই আন্দোলন শুরু করেন তার সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনে দুই সপ্তাহ ধরে কার্যত অচল হয়ে আছে নগর ভবন।
আইনি জটিলতার কথা বলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এখনো ইশরাককে শপথ পড়ানোর আয়োজন করেনি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়ার পদত্যাগ দাবি করেন ইশরাক।
তার সমর্থকদের আন্দোলনের মধ্যে ‘শপথ না দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে’ দায়ের করা রিট আবেদনটি ২২ মে সরাসরি খারিজ করে দেয় হাই কোর্ট।
বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেয়।
রিটকারীর এ ধরনের রিট করার এখতিয়ার না থাকার যুক্তিতে আবেদনটি খারিজ করে হাই কোর্ট।
হাই কোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে সোমবার আপিল বিভাগে আবেদন করেন রিটকারী আইনজীবী মামুনুর রশিদ। আবেদনে হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত চাওয়া হয়।
সেই লিভ টু আপিলের শুনানি করে আপিল বিভাগ ১ জুন বিষয়টি পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দিয়েছে।
পুরনো খবর:
ইশরাকের শপথ: আদালতের আদেশের কপি ইসিতে
রায়ের কপি পেলে জামায়াতের নিবন্ধন-প্রতীক নিয়ে সিদ্ধান্ত: ইসি সচিব