Published : 08 Jul 2024, 05:02 PM
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘কথিত উপদেষ্টাকাণ্ডে’ রাষ্ট্রদোহের মামলায় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনের রিমান্ড শুনানি পিছিয়ে গেছে।
সোমবার ঢাকার মহানগর হাকিম সাইফুর রহমান রিমান্ড শুনানির জন্য ২৩ জুলাই নতুন তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
ঢাকার পল্টন থানার এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশ পরিদর্শক মো. কবির হোসেন হাওলাদার বিএনপি নেতা ইশরাককে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেছেন। সেই শুনানির জন্য তাকে এদিন কারাগার থেকে এসে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।
অন্যদিকে ইশরাকের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, পুলিশের এ রিমান্ড আবেদনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তারা হাই কোর্টে রিট আবেদন করেছেন। আবেদনটি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
পরে বিচারক শুনানির জন্য ২৩ জুলাই নতুন দিন ধার্য করে দেন।
ইশরাকের অন্যতম আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আদালতকে বলেছি, হাই কোর্ট রিট আবেদনের শুনানি পেনডিং থাকা অবস্থায় এ মামলার রিমান্ড শুনানি করা হলে আইন, আইনের প্রসিডিউর ও সংববিধান লঙ্ঘন করা হবে। সে কারণে রিট আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ শুনানি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”
জাহিদুল ইসলাম আরেফী ওরফে মিঞা আরেফী নামে একজনকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘উপদেষ্টা’ পরিচয় দিয়ে বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করিয়ে ‘বাংলাদেশের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আসছে’ বলার ঘটনায় এই মামলা হয় ইশরাকের বিরুদ্ধে।
মিয়া আরেফীও এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশের দিন পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পর বিএনপি কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সংবাদ সম্মেলনের ভিডিওতে দেখা যায়, মিঞা আরেফী ইংরেজিতে বক্তব্য দিচ্ছেন, তার হাতের ডান দিকে বসে আছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন।
আরেফী দাবি করেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর ‘হামলার’ কঠোর ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র, ৩ নভেম্বরের পর আওয়ামী লীগ আর ‘ক্ষমতায় থাকতে পারবে না’। যুক্তরাষ্ট্র এবার পুলিশ ও আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীর ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোচনা। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের কোনো প্রতিনিধি নয়াপল্টনে গিয়েছিলেন কি না, এমন প্রশ্নে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলি বলেন, ওই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কেউ নন। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে কারও যাওয়ার তথ্য পুরোপুরি ‘মিথ্যা’।
পরের দিন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হন আরেফী।
৩০ অক্টোবর পল্টন থানায় এই ঘটনায় মামলা করেন মহিউদ্দিন শিকদার নামের এক ব্যক্তি। গোপালগঞ্জের ছেলে মহিউদ্দিন নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
এ মামলায় আরেফীর পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী এবং বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে আসামি করা হয়।
ইশরাকের বিরুদ্ধে হওয়া ১২ মামলায় জামিন চেয়ে গত ১৯ মে আবেদন করেন তার আইনজীবী মো. তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন ১১টি মামলায় তাকে জামিন দেন। তবে পল্টন থানার এই রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।
এরপর গত ২৫ মে এ মামলা ইশরাককে রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্ কর্মকর্তা। ‘ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনসহ আরো কোনো অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি জড়িত আছে কি না, তাদের তথ্য সংগ্রহ ও গ্রেপ্তারের জন্য’ ইশরাককে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চাওয়া হয় সেখানে।