Published : 08 Jun 2025, 06:22 PM
বান্দরবানের থানচির তিন্দু ইউনিয়নে খিয়াং সম্প্রদায়ের এক নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত ও দ্রুত বিচার চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ৪৭৫ জন সচেতন নাগরিক।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার তদন্ত ও বিচারকাজে ধীরগতি এবং প্রশাসনের ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নির্লিপ্ততার’ তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তারা।
এই নাগরিকরা অবিলম্বে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার দাবি নিয়েছেন বলে রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ খিয়াং স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি জনি খেয়াং, বর্তমান সভাপতি হিরো খেয়াং ও সাধারণ সম্পাদক সাহ্লাউ খেয়াং বিবৃতির বিষয়য়টি জানিয়ে এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন।
৫ মে বিকালে থানচি-লিক্রি নির্মাণাধীন সড়কে তিন্দু ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মংখয় পাড়ার বাসিন্দা চিংমা খিয়াংয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
এ নিয়ে আদিবাসীদের বিভিন্ন সংগঠনের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের মধ্যে পরদিন ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত’ করার কথা জানিয়েছিল বান্দরবান জেলা প্রশাসন।
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, “এটি একটি দুর্ঘটনা, নাকি হত্যাকাণ্ড সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঠিক কারণ অনুসন্ধানের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।
“প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবোর্চ্চ গুরুত্ব দিয়ে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। সঠিক কারণ অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
কিন্তু ঘটনার এক মাস পেরিয়ে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ‘কার্যকরী পদক্ষেপ’ গ্রহণ করা হয়নি অভিযোগ তুলে বিবৃতি দিলেন ৪৭৫ নাগরিক।
এদের মধ্যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গবেষক, শ্রমিক, সাংবাদিক, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, উন্নয়নকর্মী, পরিবেশকর্মী, ছাত্রনেতা, নারী অধিকার কর্মী, সংস্কৃতিকর্মী, কবি, লেখক, প্রকাশক, ফ্রিলান্সার, আলোকচিত্রী, চিকিৎসক, রাজনৈতিক কর্মী রয়েছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আছেন-ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসরিন সিরাজ, অধিকার কর্মী ফেরদৌস আরা রুমী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ ইউ জেড প্রিন্স, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয়, নির্মাতা ও লেখক সৈয়দা নীলিমা দোলা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আশুতোষ তঞ্চঙ্গ্যা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি রুমেন চাকমা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উসাইন মারমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “গত ৬ মে থানচি থানায় মামলা করা হলেও বান্দরবান জেলা প্রশাসন ও বান্দরবান জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার তদন্ত ও বিচারকার্যে ধীরগতি এবং প্রশাসনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নির্লিপ্ততাকে আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।”
একইসঙ্গে প্রশাসনের কাছে চিংমা খিয়াংয়ের ধর্ষণ ও হত্যার বিচারবিভাগীয় তদন্ত ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং অবিলম্বে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার দাবি জানান তারা।
এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী নিপীড়নের ঘটনার বিচার নিশ্চিত করতে পৃথক আইন ও ট্রাইব্যুনাল গঠন করার দাবিও জানিয়েছেন বিবৃতিদাতারা।