Published : 15 May 2025, 04:42 PM
মোবাইল ইন্টারনেটের দাম না কমানোয় অপারেটরদের যেসব সুবিধা দেওয়া হয়েছে সেগুলো ‘পুনর্বিবেচনা’ করা হবে বলে সতর্ক করেছেন প্রধান উপদেষ্টার তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
ঢাকার আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “মোবাইল অপারেটরগুলোর চাহিদা অনুযায়ী তাদের বেশকিছু সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এরপরও তারা দাম না কমালে তাদের পুরনো বকেয়া এবং তাদের দেওয়া সুবিধাগুলো আবার আলোচনার টেবিলে তোলা হবে।”
১৭ মে বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্যসংঘ দিবস উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সেখানে বিশেষ সহকারী তৈয়্যব বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে খরচ কমাচ্ছে সরকার। আগামী বাজেটে বিগত অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকা কম বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
তিনি বলেন, এর জন্য নিজেদের খরচ কমনো, ‘মুখরোচক’ প্রকল্প বন্ধ করাসহ নানা উদ্যোগ নেওয়ার হয়েছে। একই সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি সংস্থাগুলোর আয় বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব বিশেষ সহকারী বলেন, ‘সুবিধা’ দেওয়ার পরও দাম না কমালে মোবাইল অপারেটরগুলোকে ‘চাপের মধ্যে রাখা হবে’।
তিনি বলেন, “মোবাইল অপারেটরগুলো আমাদের কাছে ট্রান্সমিশনের বিষয়ে যেরকম সুযোগ চেয়েছিল আমরা সেগুলো দিয়েছি। তাদের ট্রান্সমিশন পর্যায়ের আইআইজি, এনটিটিএন কোম্পানিগুলো যে দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে তা আগামী জুলাই থেকে কার্যকর হবে। কারণ এই বছর তারা ঘোষিত মূল্য অনুযায়ী ট্যাক্স ভ্যাট পরিশোধ করে যাচ্ছে।
“সাবমেরিন কেবল কোম্পানিও ব্যান্ডউইথ এর দাম কমিয়েছে। এরপরও যদি মোবাইল অপারেটরগুলো ইন্টারনেটের দাম না কমায় তাহলে কিছু বকেয়া ও সেবার মান নিয়ে অমীমাংসিত বিষয়গুলো আলোচনার টেবিলে উঠবে।”
তার আগে ২১ এপ্রিল মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমাতে অপারেটরদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী।
সেদিন ফেইসবুক পোস্টে তিনি বলেছেন, “ইতোমধ্যেই সরকার মোবাইল কোম্পানিগুলোকে ডিডব্লিউডিএম (ডেনস ওয়েভলেন্থ ডিভিশন মাল্টিপ্লেক্সিং) এবং ডার্ক ফাইবার সুবিধা প্রদান করেছে।
“এমতাবস্থায় বেসরকারি মোবাইল কোম্পানিগুলোর ইন্টারনেটের দাম না কমানোর কোনো ধরনের যৌক্তিক কারণ কিংবা অজুহাত অবশিষ্ট থাকে না।”
ইন্টারনেট খাতের বিভিন্ন স্তরে দাম কমেছে জানিয়ে তৈয়্যব লেখেন, “বাকি আছে শুধুমাত্র মোবাইল সেবাদাতা তিনটি বেসরকারি কোম্পানির দাম কমানোর ঘোষণা।”
প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি বিষয়ক বিশেষ সহকারী লেখেন, “নতুন তিনটি স্তরে ইন্টারনেটের মূল্য কমছে। ফাইবার অ্যাট হোমের ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করেছেন যে- আইটিসি পর্যায়ে ১০ শতাংশ, আইআইজি পর্যায়ে ১০ শতাংশ এবং এনটিটিএন বা ন্যাশনাল ট্রান্সমিশন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ মূল্য হ্রাস করবেন তারা।”
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে ‘মুখোরচক’ প্রকল্প থেকে বেরিয়ে সরকার ব্যয় কমিয়ে আনার অংশ হিসেবে ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানান তৈয়্যব। তাদের নীতির কারণে এরই মধ্যে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল ও খুলনা কেবল কোম্পানির আয় বেড়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
এক পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, “লুটপাটের সংস্কৃতি থেকে আমাদের মন্ত্রণালয় সরে এসেছে বলে আমি মনে করি।”
এদিকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী বলেছেন, সরকার ইন্টারনেটের প্যাকেজ সংখ্যা বেঁধে দিতে চায় না।
তিনি বলেন, “তারা (মোবাইল অপারেটর) তাদের মত করে প্যাকেজগুলো নির্ধারণ করুক। আমরা এখানে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। আর যারা বলেন যে অনেকগুলো প্যাকেজ থাকলে মানুষের বেছে নিতে অসুবিধা হবে তারা এখনকার তরুণদের বুদ্ধিমত্তাকে খাটো করে দেখছেন।”
সংবাদ সম্মেলনে আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
১৭ মে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন আইটিইউ-এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। সেদিন বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্যসংঘ দিবস পালন করা হয়। এবছর আইটিইউর ১৬০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দিবসটির প্রতিপাদ্য-‘ডিজিটাল রূপান্তরে নারী-পুরুষ সমতায়ন’। এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
এই দিবসটি পালনের অংশ হিসেবে, জুলাই আন্দোলনে আহতদের বিশেষ ডিভাইস সরবরাহ করা হবে।
এ বিষয়ে ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, “জুলাই আন্দোলনে যারা অঙ্গ হারিয়েছেন তাদের বিশেষ ডিভাইস দেওয়া হবে একটি সংস্থার সহায়তায়। এছাড়া জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে যাদের ডিজিটাল লিটারেসি আছে তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত করা হবে।