Published : 18 Feb 2025, 04:55 PM
সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানকে চার দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) অনুমতি দিয়েছে আদালত।
ঢাকার সাভারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হৃদয় আহমেদ হত্যা মামলায় মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত মূখ্য বিচারিক হাকিম কে এম মহিউদ্দিন এ আদেশ দেন।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এম এ কালাম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এনামুর রহমানের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল ও তার জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে রিমান্ডের আদেশ দেন, বলেন অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি।
সরকার পতনের প্রায় ছয় মাসের মাথায় গত ২৬ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী এনামুরকে।
পরদিন পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গত ১৯ জুলাই মিরপুর গোলচত্বরে হকার মো. সাগর হত্যা মামলায় নেওয়া রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
১২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ শিক্ষার্থী কাইয়ুমের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় এনামুর রহমানের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। সেদিন সাভার থানার আরও ছয় মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ৫ অগাস্ট দুপুরে সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান কাইয়ুম।
হৃদয় হত্যা মামলার এজাহারে বলা হয়, ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট দুপুরে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঠেকাতে ওইদিন সাভারে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে মারা যায় ৩৫ জন।
এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা পুলিশকে ঘিরে ফেলে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সাভার থানা রোডের মুক্তির মোড়ে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে বুকে ও পেটে গুলিবিদ্ধ হন হৃদয় আহমেদ (২২)।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ আগস্ট সকালে মারা যান তিনি।
৩০ আগস্ট সাভার মডেল থানায় হৃদয় আহমেদের বাবা রাজু আহমেদ মামলাটি করেন। মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ৩০৮ জনকে আসামি করা হয়।
পেশায় চিকিৎসক এবং সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এনাম ২০১৯ সালে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় থাকলেও ২০২৪ সালে বাদ পড়েন।
২০১৩ সালের রানা প্লাজা ধসের পর আহতদের একটি বড় অংশের চিকিৎসা হয়েছিল এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এতে এনামুরের প্রশংসা ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে তাকে নৌকা প্রতীক দেয় ক্ষমতাসীন দল।
বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের সেই নির্বাচনে জনপ্রিয়তার পরীক্ষা দিতে হয়নি এনামুরকে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে সংসদে আসেন তিনি।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একই আসন থেকে জয় লাভ করেন। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি শেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রিসভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
তবে ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু তাকে হারিয়ে বিজয়ী হন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম, যিনি আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।