Published : 23 Jul 2024, 10:54 PM
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে বৃহস্পতি ও শুক্রবার মহাখালী এলাকায় যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে, তাতে বাদ যায়নি স্বাস্থ্য সেবাখাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পুরনো ভবন, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) ভবন, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি ভবন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর (আইপিএইচ), জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচির কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে।
এর মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পুরনো ভবনের সামনে থাকা ২৩টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। ভাঙা হয়েছে ভবনের প্রধান ফটক ও ভবনের গ্লাস। ভাঙচুর করা হয় স্বাস্থ্যের বিভিন্ন অফিসের ২৮টি গাড়ি। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির একটি জেনারেটর আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, শুক্রবার সংস্থার পুরনো ভবনের সামনে থাকা যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। পরে এতে আগুন ধরিয়ে দিলে ২৩টি গাড়ি একেবারে পুড়ে যায়। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখা, গাড়িচালকদের বিশ্রামকক্ষে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ভেঙে ফেলা হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম খুরশীদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২৩টি গাড়ি পোড়ানো ছাড়াও ২৮টি গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এরমধ্যে তার নিজের ব্যবহারের গাড়িও রয়েছে।
“২৩টি গাড়ি একেবারে ছাই হয়ে গেছে। সেগুলো আর ব্যবহার করা যাবে না। বাকি গাড়িগুলোয় এমন ভাঙচুর চালানো হয়েছে, সেগুলো আদৌ মেরামত করা যাবে কি না- আমরা সন্দিহান।”
এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, ঘটনার পরপরই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন কর্মকর্তা অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে বনানী থানায় মামলা করেছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার পরিচালককে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়েছে। তারা ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ করছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সব ধরনের তথ্য থাকে এমআইএসে। সার্ভার রুমের গেট আটকানো থাকায় ওই পর্যন্ত যেতে পারেনি দুষ্কৃতিকারীরা। ফলে সার্ভার রুমে ঢুকতে পারেনি তারা। সেই কারণে সার্ভার এখনও অক্ষত আছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম মহাখালীতে হামলার মুখে পড়েন। তাদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সে হামলা করা হয়। তবে তারা নিরাপদে বাসায় ফেরেন।
ওইদিনের ঘটনার বর্ণনায় এ বি এম খুরশীদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে থেকে বের হন তিনি। তার স্ত্রী মহাখালীর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জন-বিসিপিএসে আটকে পড়ায় সেখানে যান তিনি। তখন বিসিপিএস পরীক্ষা দিতে আসা কয়েকজন নারী চিকিৎসকও সেখানে আটকা পড়েন। ওই শিক্ষার্থীদের শাহবাগ এলাকায় পৌঁছে দিতে একটি অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন তারা। মহাপরিচালকের ব্যবহারের গাড়িটি বিসিপিএসের নিচতলায় রেখে যান।
এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, বিসিপিএস থেকে বের হয়ে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের সামনে গিয়েই আন্দোলনকারীদের হামলার মুখে পড়েন তারা। লাঠিসোঁটা নিয়ে আক্রমণ করতে আসে তাদের।
“এ সময় আমি দরজা খুলে আমাদের ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করি। আমি আমার পরিচয় দিইনি। মেয়েদের সবার গায়েই অ্যাপ্রন ছিল। বললাম আমরা ডাক্তার, হাসপাতালের কাজে যাচ্ছি। তিন-চারজন এসে বলল, ছেড়ে দিতে। তারা আমাদের ছেড়ে দেয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, “এরপর সেদিন রাতে তারা বিসিপিএসে হামলা করে। সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। সে সময় সেখানে রেখে আসা আমার ব্যবহারের গাড়িটিও ভেঙে ফেলে। এটি এমনভাবে ভেঙেছে এটা মেরামত করা যাবে কি না জানি না।”
অধ্যাপক খুরশীদ বলেন, মুগদা হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ভেঙে ফেলা হয়েছে। ঢাকার বাইরে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না, সে খবর এখনও জানা যায়নি।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পুরোনো ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, পুড়ে যাওয়া গাড়িগুলো অধিদপ্তরের খালি জায়গায় পড়ে আছে। সেখানে ভেঙে ফেলা গাড়িগুলোও রয়েছে।
সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিরাপত্তায় থাকা আনসার সদস্য বিশ্বজিত কুমার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃহস্পতিবারও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রাঙ্গণে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল আন্দোলনকারীরা। সে সময় তারা অনুরোধ করলে আন্দোলনকারীরা ফিরে যায়। তবে শুক্রবার জুমার নামাজের পর পুলিশের সঙ্গে ফের সংঘর্ষ শুরুর একপর্যায়ে প্রধান ফটক ভেঙে ঢুকে পড়ে আন্দোলনকারীরা।
“জুমার নামাজের পর পুলিশের সঙ্গে তাদের ব্যাপক ধাওয়া, পাল্টা হয়। একপর্যায়ে অন্তত ২০০ জন লোক গেট ভেঙে এখানে ঢুকে পড়ে। আমাদের মারধর করে, একপর্যায়ে সামনে এগিয়ে গিয়ে গাড়িগুলো ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করলে আমাদের আবার মারধর করে। এ সময় গেইটের বাইরে ছিল আরও কয়েকশ মানুষ। তাদের মধ্যে ছাত্র ছিল, আবার ছাত্র নয়- এমন লোককেও দেখেছি ভাঙচুর করতে।”