Published : 01 Jun 2025, 02:42 PM
সাপ্তাহিক ছুটির দুই দিন বিরতি দিয়ে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে ফের নগর ভবন অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারীরা।
রোববার বেলা ১১টা থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে ডিএসসিসির কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কদমতলী ৫২ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রবিউল আলম দীপুর নেতৃত্ব শখানেক নেতা-কর্মী যোগ দিয়েছেন।
নগর ভবনের সবগুলো গেইটে তালা ঝুলিয়ে দাবি আদায়ে স্লোগান ধরেছেন আন্দোলনরতা। তারা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ারও পদত্যাগ দাবি করেছেন তারা।
বিএনপির সভাপতি দীপু বলেন, "ইশরাক হোসেন জনতার মেয়র। তার শপথ নিয়ে সরকার টালবাহানা করে অন্যায়ের আশ্রয় নিচ্ছে। আদালত অবমাননা করছে। আমরা শুরু থেকেই এই আন্দোলনের সঙ্গে আছি। জনতার মেয়রকে শপথ না পড়ানো পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।“
সরকারের সমালোচনা করে দীপু বলেন, "রায়ও এসেছে, রিটও খারিজ, আর কিসের জন্য অপেক্ষা? সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে দায়িত্ব দিচ্ছে না।"
গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে ইশরাক সমর্থক ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। টানা আন্দোলন ও কর্মসূচির কারণে সিটি করপোরেশনের সব ধরনের কার্যক্রম কার্যত বন্ধ আছে। এ জন্য নাগরিক সেবায় যে ধরনের ভোগান্তি তৈরি হয়েছে, যার দায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ওপর দিয়েছেন ইশরাক সমর্থকরা।
প্রেক্ষাপট
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সবশেষ নির্বাচন হয়। তাতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।
এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয় সেজন্য গত ১৪ মে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ।
অন্যদিকে ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে ওইদিনই আন্দোলন শুরু করেন তার সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনে দুই সপ্তাহ ধরে কার্যত অচল হয়ে আছে নগর ভবন।
আইনি জটিলতার কথা বলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এখনো ইশরাককে শপথ পড়ানোর আয়োজন করেনি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়ার পদত্যাগ দাবি করেন ইশরাক।
তার সমর্থকদের আন্দোলনের মধ্যে ‘শপথ না দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে’ দায়ের করা রিট আবেদনটি ২২ মে সরাসরি খারিজ করে দেয় হাই কোর্ট।
বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেয়।
রিটকারীর এ ধরনের রিট করার এখতিয়ার না থাকার যুক্তিতে আবেদনটি খারিজ করে হাই কোর্ট।
হাই কোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে পরে আপিল বিভাগে আবেদন করেন রিটকারী আইনজীবী মামুনুর রশিদ। আবেদনে হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত চাওয়া হয়।
সেই লিভ টু আপিলের শুনানি হয় বৃহস্পিতবার। সেদিন ইশরাকের শপথ আটকাতে আপিল বিভাগে যে আবেদন করা হয়েছিল, তা পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
এই জটিলতায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, নির্বাচন কমিশন এক্ষেত্রে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি।
কিন্তু তাতে ধোঁয়াশা কাটেনি, ইশরাক হোসেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বসার সুযোগ পাবেন কি না, তা স্পষ্ট হয়নি।
ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট জারির জন্য নির্বাচন কমিশন মন্ত্রণালয়ের কাছে যে মতামত চেয়েছিল, তা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেছে সর্বোচ্চ আদালত।
আপিল বিভাগ বলেছে, সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা দিয়েছে। সেই ক্ষমতা প্রয়োগ না করে নির্বাচন কমিশন আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছে। অথচ সংবিধান অনুযায়ী উল্টো নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য করার কথা মন্ত্রণালয়ের।
আরও পড়ুন:
নগর ভবনের সামনে ইশরাক সমর্থকদের বিক্ষোভ, যানজটে নাকাল চলতি পথের যাত্রী