Published : 27 Jan 2025, 09:19 PM
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য ভারত থেকে ফেরাতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারির বিষয়ে হালনাগাদ কোনো তথ্য না থাকার কথা বলেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, রেড নোটিসের ব্যাপারে ‘আমার কাছে আপডেটেড তথ্য নাই’।
প্রবল গণ আন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশই এখনও আত্মগোপনে রয়েছেন।
এরইমধ্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন পীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুবনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
গত ৫ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে সারাদেশে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অনেক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে জমা পড়েছে।
এর মধ্যে দুটি মামলায় শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ অনেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল।
বিচারের মুখোমুখি করার জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারত সরকারকে কূটনৈতিকপত্র (নোট ভারবাল) পাঠায় বাংলাদেশ সরকার।
ভারত এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব বাংলাদেশকে দেয়নি, বরং ভারতে হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর খবর এসেছে দেশটির সংবাদমাধ্যমে।
ওই চিঠি দেওয়ার আগে থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর বিষয়ে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারির কথা বলে আসছে সরকার ও আইসিটির প্রসিকিউশন বিভাগ।
হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে চিঠি দেওয়ার কথা ১২ নভেম্বর বলেছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
এরপর আড়াই মাস পার হলেও আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে এখন পর্যন্ত রেড নোটিস পাওয়া যায়নি।
ইন্টারপোলের রেড নোটিস কি?
রেড নোটিসের বিষয়ে ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, রেড নোটিস হচ্ছে প্রত্যর্পণ, আত্মসমর্পণ বা এ ধরনের কোনো আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা কোনো ব্যক্তির খোঁজ পেতে এবং সাময়িকভাবে গ্রেপ্তারের জন্য বিশ্বব্যাপী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানানোর প্রক্রিয়া। রেড নোটিস কোনো আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নয়।
ইন্টারপোল বলছে, কোনো সদস্য দেশ বা আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল ওই ব্যক্তিদের চাইতে পারে। কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে সদস্য দেশগুলো নিজ দেশের আইন অনুসরণ করে থাকে।
এই রেড নোটিসগুলো কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবহারের জন্য হওয়ার কথা তুলে ধরে সংস্থাটি বলছে, সদস্য দেশের অনুরোধে রেড নোটিসের সংক্ষিপ্তসার প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
শেখ হাসিনার বিষয়ে রেড নোটিসের বিষয়ে আরেক প্রশ্নে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, “কোনো দেশ থেকে সন্দেহভাজন অপরাধীর তথ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশটি ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করে রেড নোটিস জারি করতে পারে। রেড নোটিস ইন্টারপোলের আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সমতুল্য।”
বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি নারী হত্যার তথ্য চাওয়া হয়েছে
ভারতের কর্নাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি নারীকে ‘ধর্ষণের পর হত্যার’ বিষয়ে তথ্য চাওয়ার কথা বলেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রফিকুল আলম।
এ বিষয়ক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “বেঙ্গালুরুতে যে ঘটনার কথা বলেছেন, সেটা সংশ্লিষ্ট মিশনকে জানতে চাইতে বলা হয়েছে যে, ঘটনা কী। তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট পেলে আমরা এটা জানাতে পারব। আমাদের মিশনকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
গত শুক্রবার বেঙ্গালুরুর রামামূর্তি এলাকার একটি লেক পাড় থেকে ২৮ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি নারীর মরদেহ উদ্ধারের তথ্য প্রকাশ করে হিন্দুস্থান টাইমস লিখেছে, প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, তাকে ‘ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে’।
বাংলাদেশি ওই নারীর পরিচয় প্রকাশ করেনি কর্ণাটক পুলিশ। তবে তারা জানিয়েছে, ওই নারী একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে গৃহকর্মী ছিলেন। তার পরিবারও রামামূর্তি এলাকাতেই থাকে। তার স্বামী বেঙ্গালুরু পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মী। তাদের তিনটি ছোট সন্তান আছে।
রোববার কুলাউড়া সীমান্তে এক বাংলাদেশিকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা নিয়েও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের খোঁজখবর করার কথা বলেছেন মুখপাত্র।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। আমরা যতটুকু দেখেছি যে, এটা অনেকটা পারিবারিক দ্বন্দ্বের মত।
“যেহেতু এখানে সীমানা লঙ্ঘনের একটা ঘটনা ঘটেছে, বিজিবি এখানে বিএসএফের সাথে আলোচনা করারও চেষ্টা করেছে। আমাদের কাছে বিস্তারিত তথ্য নেই; কিন্তু আমাদের সংশ্লিষ্ট উইং এটা নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে।“
ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অংশগ্রহণকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে অভিহিত করে আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা সবসময় বলে আসছি, বাংলাদেশ সবদেশের সাথেই সুসম্পর্ক আশা করে, প্রত্যাশা করে এবং এখানে উপস্থিতি এটাকে আলাদাভাবে দেখার কোনো কারণ আমি দেখছি না।
“যেকোনো দেশের প্রজাতন্ত্র দিবস বলেন বা জাতীয় দিবস বলেন, সেখানে সবসময় একজন প্রধান অতিথি থাকে, উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি থাকে, এটা স্বাভাবিক একটা ঘটনা। সেই ঘটনার ধারাবাহিকতায় প্রধান অতিথিকে উপস্থিত থাকতে দেখেছেন এবং আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।”