Published : 05 Jun 2025, 12:37 AM
বিপিএলের দল খুলনা টাইগার্সের মালিক ইকবাল আল মাহমুদসহ চারজনের বিরুদ্ধে ভ্রুণ হত্যা ও যৌতুকের জন্য নির্যাতনের মামলা ২৫ লাখ টাকার আপসে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. ছানাউল্যাহ'র আদালতে বাদীপক্ষ ও আসামিপক্ষ আপসনামা দাখিল করে। শুনানি শেষে আদালত মামলাটি প্রত্যাহারে আবেদনে সম্মতি দেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মহিমা বাঁধন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফার ডটকমকে বিষয়টি জানান।
আপসনামায় বলা হয়, বাদীর সঙ্গে আসামি ইকবালের প্রেম ও বিয়ের পর সম্পর্কের টানাপড়েন ও শারীরিক নির্যাতনের কারণে বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়। এখন উভয় পক্ষের আইনজীবী এবং আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিতিতে শর্ত সাপেক্ষে এই আপসনামা দাখিল করা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়, আসামি ইকবাল আল মাহমুদ বাদীকে ২৫ লাখ টাকা ঢাকা ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে দেবেন–এই শর্তে মামলা প্রত্যাহারের আপস হয়। সেই সমঝোতা অনুযায়ী বাদী ৩ জুন চেকের মাধ্যমে টাকা পেয়েছেন।
এছাড়া বিগত দিনের ঘটনাবলী নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো পক্ষ কোনো ফৌজদারি বা দেওয়ানি মামলা করবে না বলে আপসনামায় অঙ্গীকার করা হয়েছে।
গত ১ জুন বিকেলে খুলনা টাইগার্সের মালিক ইকবাল আল মাহমুদ এবং তার প্রথম স্ত্রী ফিরোজা বেগমকে এ মামলায় গ্রেপ্তার করে গুলশান থানা পুলিশ। পরদিন তাদের আদালতে হাজির করা হলে দুইপক্ষ আপস করবেন বলে জানান।
আপোসের শর্ত পূরণ করতে আদালত আসামিদের দুই দিনের জামিন জন্য দেয়। সেই শর্ত পূরণ হওয়ায় বিচারক মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদনে সম্মতি দেন।
জামিন পাওয়ার পর ইকবাল আল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি মামলা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। রোববার অফিস করছিলেন, তখন তাকে গ্রেপ্তার করে আনা হয়।
মামলায় কী কী অভিযোগ রয়েছ সেটাও জানেন না বলে তিনি দাবি করেন। তিনি এও দাবি করেন, মামলার বাদী তার স্ত্রী নয়।
তিনি বলেছিলেন, “কে মামলা করেছে তাকে চিনি না। এ মামলায় আমাকে ও আমার স্ত্রীকে (ফিরোজা) আদালতে আসতে হল।”
মামলার অভিযোগে বলা হয়, মামলার বাদী ২০১১ সালের ১৪ জানুয়ারি প্রথম বিয়ে করেন। কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় ২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর বিচ্ছেদ হয়। পরে ২০২১ সালে ইকবাল আল মাহমুদের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং তা প্রেমের সম্পর্কের রূপ নেয়।
২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি ৩০ লাখ টাকা দেনমোহরে কক্সবাজারের হোটেল রয়েল টিউলিপে ইকবালের সঙ্গে বাদীর বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই বাদীকে বিভিন্নভাবে ‘মানসিক অত্যাচার’ করতে থাকেন ইকবাল।
বিয়ের প্রায় ৭ মাস পর বাদী গর্ভবতী হন। ইকবাল তখন তাকে গর্ভপাত করার জন্য ‘চাপ দিতে থাকেন’। তাতে গর্ভপাতে করাতে ‘বাধ্য হন’ বাদী। সেই অপারেশনের কারণে তার বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা দেখা দেয় এবং তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পরে শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটলে ব্যবসার প্রয়োজনের কথা বলে ইকবাল ‘যৌতুক’ দাবি করেন এবং ‘শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন’ করতে থাকেন বলে অভিযোগ করা হয় মামলায়। এক পর্যায়ে বাদী ‘নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তাকে ১৮ লাখ টাকা দেন।
এর মধ্যেই বাদী জানতে পারেন, আগের স্ত্রীর সঙ্গে ইকবালের বিচ্ছেদ হয়নি এবং তার দুটি বাচ্চা আছে। বিষয়টি জানতে পেরে বাদী তার সঙ্গে সংসার করবেন না বলে জানান এবং যৌতুক হিসেবে নেওয়া টাকা ও মোহরানা দাবি করেন।
ইকবাল তখন বাদীকে সংসার করার জন্য ‘চাপ’ দেন এবং নতুন করে আরো ১০ লাখ ‘যৌতুক দাবি করেন’। সংসার না করলে বিভিন্ন সময়ে তোলা দাম্পত্য সম্পর্কের অন্তরঙ্গ মূহুর্তের ছবি ইন্টারনেটে ‘ভাইরাল করার’ হুমকি দেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
সেখানে বলা হয়, ২০২৫ সালের ১ মে বাদী আসামির গুলশানের বাসার সামনে যান এবং ইকবালের কাছে বিয়ের কাবিননামা ও যৌতুক বাবদ দেওয়া টাকা ফেরত চান। ইকবাল তখন ‘অত্যন্ত বাজে ভাষায় গালিগালাজ’ করেন এবং ‘গায়ে হাত’ তোলেন। এরপর আদালতে মামলা করেন ওই ভুক্তভোগী নারী।