Published : 25 Mar 2025, 10:42 PM
ঈদুল ফিতর সামনে রেখে রাজধানীর বাস টার্মিনালে বেড়েছে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ।
পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, মঙ্গলবার বিকালের পর থেকেই মূলত কাউন্টারগুলোয় টিকেটের চাহিদা বাড়তে থাকে।
আগামী ৩১ মার্চ (সোমবার) ঈদুল ফিতর ধরে আগেই ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। এর আগে-পরে (২৯ ও ৩০ মার্চ এবং ১ ও ২ এপ্রিল) চার দিন ছুটি দেওয়া হয়েছিল নির্বাহী আদেশে।
ঈদের ছুটি শুরুর আগে ২৮ মার্চ পড়েছে শুক্রবার। শবে কদরেরও ছুটিও সেদিন।
ছুটি শেষে অফিস খোলার কথা ছিল ৩ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার)। সেদিনও নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার।
তার পরের দুই দিন আবার সাপ্তাহিক ছুটি। সে হিসাবে ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা নয় দিনের ছুটিতে থাকবেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
ঈদের ছুটি শুরুর আগে সরকারি চাকরিজীবীদের শেষ অফিস ২৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার)। তার আগের দিন আবার ২৬ মার্চের ছুটি।
ফলে যারা ঈদের আগের বৃহস্পতিবার ছুটি নিতে পেরেছেন, তারা মঙ্গলবার অফিস শেষেই বাড়ি ফেরার পথে রওনা হয়েছেন।
এদিন বিকাল থেকে গাবতলীতে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। পথে ইফতারের প্রস্তুতিও নিয়ে এসেছেন অনেকে।
দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক মানুষ সড়ক পথে বাড়ি ফেরেন গাবতলী থেকে।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ইসরাত জাহান বলেন, তারা যাচ্ছেন নীলফামারীর চিলাহাটি। সন্ধ্যার আগেই দেবর জিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাগ-বোচকা নিয়ে, টিফিন বক্সে ইফতারি বেঁধে বাস কাউন্টারে চলে এসেছেন। তার স্বামী জিন্নাতুন নবী এসেছেন সরাসরি অফিস থেকে।
ইসরাত বলেন, “এখানে এসে দেখি এলাকার আরও কয়েকজন। বাস ছাড়বে রাত ৮টায়। কিন্তু ঈদযাত্রার যানজট এড়াতেই তাদের এ প্রস্তুতি।
বাস কাউন্টারগুলোতে টিকেট কাটার চাপও অনেক। তবে এখন বাসগুলোর শেষের সারি আর ইঞ্জিন কভার ছাড়া ভালো টিকেট অবশিষ্ট নেই।
কাউন্টারের কর্মীরা বলেন, ২৫, ২৬ ও ২৭ মার্চের টিকেটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এসব দিনে ‘ভালো’ কোনো বাসের টিকেট নেই বললেই চলে।
টিকেটের চাহিদা বেশি থাকায় কিছু পরিবহন গাড়ি ভাড়া করে ট্রিপ সংখ্যা বাড়িয়েছে।
তাজ পরিবহনের কাউন্টারে কাজ করা জাহাঙ্গীর বলেন, তাদের কাছে সেই বাড়তি ট্রিপের কিছু টিকেট আছে। এখন সেগুলোই তারা বিক্রি করছেন।
বাড়ি ফিরতে দল বেঁধে টিকেট কাটছিলেন কয়েক নির্মাণ শ্রমিক। তাদের একজন আব্দুর রাজ্জাক বলেন, "ঈদের সময় গাড়ি ভাড়া অনেক, আসতে-যাইতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়।
“তার ওপর কাজ ছিল না অনেক দিন। কিন্তু কিছু করার নেই, বাড়িতে মা-ভাই-বোন আছে, যেতেই হবে; তাদের জন্য কিছু নিয়েও যেতে হবে।"
রাজ্জাক বলেন, মায়ের জন্য শাড়ি কিনেছেন, ভাইয়ের মেয়েদের জন্য নিয়েছেন জামা ও চুরি-ফিতা। ভাইকে একটা শার্ট দিতে হবে, সেটা এলাকার কোনো বাজার থেকে কিনে দেবেন।
শেষ মুহূর্তে গাড়ি ধোয়ামোছা করছিলেন বুড়িমারী এক্সপ্রেস পরিবহনের হেলপার আরমান। তিনি বলেন, ঈদযাত্রা শুরু হওয়ার পর গাড়ি ভালো করে পরিষ্কার করার সুযোগ পাওয়া যায় না। তাই এখন যতখানি সম্ভব ধুয়ে-মুছে নিচ্ছেন।
বাসচালক ইয়াকুব আলি স্টিয়ারিংয়ে বসে তরমুজ খাচ্ছিলে। তিনি বলেন, "এই যে আল্লাহর নাম নিয়ে স্টিয়ারিংয়ে বইছি, কবে নামমু, তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নাই। ঈদের সময় যেমন কামাই, তেমন কষ্টও।"
টানা গাড়ি চালানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “না ঘুমানোর অভ্যাস আছে। তবে ঈদের সময় টানা তিন-চারদিন না ঘুমাইলে আর কিছুই ভালো লাগে না। পেটে গ্যাস জমে যায়।”
ঈদে বাড়ি ফিরতে রাজধানীর কোটি মানুষ মোটা দাগে পাঁচটি সড়ক ব্যবহার করেন। তার মধ্যে ঢাকা-সিলেট ছাড়া বাকিগুলোয় এবার যানজটের তেমন আশঙ্কা নেই বলে মনে করেন যানবাহনের চালক, মালিক বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (মিডিয়া) মো. শামসুল আলম গত সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমনিতে এবার আমরা যানজটের তেমন আশঙ্কা দেখছি না।
“উত্তরের রাস্তাঘাট ভালোই আছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ অঞ্চলেও রাস্তা ভালো আছে।”
তবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ছয় লেনের কাজ চলায় কিছু এলাকায় দুর্ভোগের শঙ্কা রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ঢাকা সিলেট হাইওয়েতে কাজ চলছে। সেখানে সড়ক সরু হয়ে এসেছে, কিছু ভাঙাচোরাও আছে। সব মিলিয়ে এখানে দুর্ভোগের একটা আশঙ্কা রয়ে গেছে।”
ঘরমুখো মানুষ যেন নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারেন, সেজন্য শ্যামলী-কল্যাণপুর থেকেই পুলিশ তৎপর রয়েছে। সড়কের পাশে বড় বাসগুলো এক সারিতে দাঁড়াতে পারছে। অন্য যানবাহনকে সড়কে দাঁড়াতেই দেওয়া হচ্ছে না।
এসব প্রচেষ্টার পরেও অবশ্য সন্ধ্যা লাগতে না লাগতেই গাবতলী ও মাজার রোড এলাকায় যানজট বেড়ে যায়।