Published : 27 May 2025, 12:38 PM
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের’ মামলায় আপিলে খালাস পাওয়ার পর বিচারপতিদের প্রশংসা করেছেন দৈনিক যায়যায়দিনের সম্পাদক শফিক রেহমান।
‘লাল গোলাপ’ খ্যাত এ সাংবাদিক বলেছেন, “আপনারা শুনেছেন- সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ এবং হত্যা চেষ্টার যে মামলা করা হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৬ এপ্রিলে, আজ সেটির রায় হলো। রায়ে মামলাটি থেকে আমাকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
“সুদীর্ঘ ৯ বছর পরে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি আন্তরিক ধন্যবাদ ও প্রশংসা করছি মাননীয় বিচারকবৃন্দকে। তারা এটাও প্রতিষ্ঠা করলেন, এখন বিচার বিভাগ স্বাধীন।”
মঙ্গলবার আপিলের রায় পাওয়ার পর ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে লিখিত এ বক্তব্য তুলে ধরেন শফিক রেহমান। এদিন তার খালাসের রায় ঘোষণা করেন ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তারিক এজাজ।
২০২৩ সালের অগাস্টে এ মামলার রায়ে যায়যায়দিন সম্পাদক শফিক রেহমান, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
তাদের মধ্যে মাহমুদুর রহমান গত ১০ ফেব্রুয়ারি খালাস পেয়েছিলেন। এবার শফিক রেহমানকেও খালাস দেওয়া হল।
রায় শুনতে বেলা সোয়া ১১টার দিকে আদালতে হাজির হন শফিক রেহমান। একা হাঁটতে অনেকটা অক্ষম এ সাংবাদিককে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যান তার আইনজীবীরা। ১১টা ২৩ মিনিটের দিকে বিচারক রায় ঘোষণা করেন।
রায় শুনে আদালত থেকে বের হয়ে আইনজীবী, সাংবাদিকদের লাল গোলাপের শুভেচ্ছা জানান নবতিপর শফিক রেহমান। এরপর আদালত প্রাঙ্গণের বটতলায় দাঁড়িয়ে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
শফিক রেহমান বলেন, “আজ আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই- ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে। তিনি বহু সভা-সমিতিতে আমার মুক্তি দাবি করেছিলেন। আমাকে গ্রেপ্তার করার পর তিনি দেশের আইনজীবীদের আমার পক্ষে দাড়াতে আহ্বান জানিয়েছিলেন।
“এই মুহূর্তে স্মরণ করছি প্রয়াত আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী এবং প্রয়াত আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়াকে। এদের সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করেন অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান, জয়নুল আবেদিন মেজবাহ, মাসুদ তালুকদার, ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন, ব্যারিস্টার ফারজানা শারমিন পুতুল, অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম, রাজীব আহসান চৌধুরী পাপ্পু, কামরুজ্জামান সুমন, শাকিল আহমেদ রিপন। তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
সহধর্মিনী তালেয়া ও ছেলে সুমিতের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকশা করেন যায়যায়দিন সম্পাদক।
“তিনি (তালেয়া রেহমান) এখন লন্ডনে চিকিৎসাধীন আছেন। আমার গ্রেপ্তারের দিন থেকে তার ওপরও অনেক ঝড়ঝাপটা গেছে। ধন্যবাদ জানাতে চাই- আমার ছেলে সুমিত রেহমানকে; যিনি আমার মুক্তির দাবিতে লন্ডনে কয়েক হাজার ব্রিটিশ ভোটারের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছিলেন।”
শফিক রেহমান বলেন, “আমি সর্বোপরি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই জুলাই বিপ্লবীদের, যারা নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ও জীবিত আছেন- তাদের সবাইকে। তাদের আত্মত্যাগের ফলেই আজ সত্যটা প্রতিষ্ঠিত হতে পারল।”
শফিক রেহমান সাপ্তাহিক যায়যায়দিন এবং পরে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ‘মৌচাকে ঢিল’ নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকা সম্পাদনা করেও আলোচিত হয়েছেন।
তবে টেলিভিশনে ‘লাল গোলাপ’ নামে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান। লেখক, সম্পাদক, টেলিভিশন অনুষ্ঠান উপস্থাপক এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।
সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের’ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০১৬ সালে পাঁচ মাস কারাগারে থাকতে হয়েছিল শফিক রেহমানকে। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যে চলে যান তিনি।
গত ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানের পর ছয় বছরের প্রবাসজীবন থেকে ১৮ অগাস্ট দেশে ফেরেন শফিক রেহমান। এখন তিনি দৈনিক যায়যায়দিনের সম্পাদক ও প্রকাশক।