Published : 15 Jul 2024, 08:37 PM
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষোভ-মিছিলে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা যে স্লোগান দিয়েছেন তার নিন্দা জানিয়েছেন শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ২৪ নাগরিক।
সোমবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে তারা ‘ব্যথিত, ক্ষুব্ধ’।
বিবৃতিদাতারা হলেন- অধ্যাপক অনুপম সেন, সৈয়দ হাসান ইমাম, ফেরদৌসী মজুমদার, সুজেয় শ্যাম, ডা. সারওয়ার আলী, আবেদ খান, কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ আলী (বীর প্রতীক), মামুনুর রশীদ, মফিদুল হক, শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, অধ্যাপক কামরুল হাসান খান, অধ্যাপক শফি আহমেদ, অধ্যাপক আবদুস সেলিম, অধ্যাপক মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, ম. হামিদ, রাইসুল ইসলাম আসাদ, গোলাম কুদ্দুছ, শ্যামল দত্ত, অধ্যাপক মলয় ভৌমিক, লাকী ইনাম, সারা যাকের, শিমূল ইউসুফ ও আহকাম উল্লাহ।
বিবৃতিতে বলা হয়, “গতকাল (রোববার) গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের মিছিল থেকে ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান শুনে আমরা খুবই বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হয়েছি।
“বাঙালি জাতিসত্তার লালন, জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রসার এবং উদার সংস্কৃতি চর্চার তীর্থভূমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী রাজাকারদের প্রতিনিধিত্ব দাবি করে এমন স্লোগান উচ্চারিত হওয়ায় আমরা যারপরনাই ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ হয়েছি।”
২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা দুই সপ্তাহ ধরে টানা আন্দোলন চালিয়ে আসছে। এর মধ্যে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি আদালতেই ফয়সালা করতে হবে।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে সরকারপ্রধান বলেন, “কোটা আন্দোলন করার আগে তো তাদের রেজাল্টগুলো দেখা উচিত ছিল যে- কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে! দ্বিতীয়টি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি পুতিরা (চাকরি) পাবে?
“মুক্তিযোদ্ধাদের অপরাধটা কী? নিজের জীবন বাজি রেখে, নিজের পরিবার সংসার সব বাদ দিয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, খেয়ে না খেয়ে, কাদা মাটিতে রোদ বৃষ্টি ঝড় সব উপেক্ষা করে যুদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন করেছে। মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় এনে দিয়েছিল বলেই সবাই উচ্চপদে আসীন, আজকে বড় গলায় কথা বলতে পারছে। নইলে পাকিস্তানিদের বুটের লাথি খেয়ে মরতে হত।”
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে ‘মর্মাহত’ হয়ে রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষালয়ে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ দেখান; যেখানে স্লোগান দেওয়া হয়, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার-রাজাকার; কে বলেছে কে বলেছ, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’।
এ ঘটনায় বিবৃতিদাতারা বলেছেন, “আমরা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের একাংশের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এই ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানাই। আশা করি, তারা তাদের ভুল বুঝতে পারবে ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দাবি আদায়ের পথে পরিচালিত হবে।”