Published : 27 May 2025, 02:48 PM
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে এবার নগর ভবনের সামনের রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করছেন ডিএসসিসির কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে নগর ভবনের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। ঘণ্টাখানেক পর ঢাকার দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ইশরাকের সমর্থকেরা নগর ভবনের সামনে এসে বিক্ষোভে অংশ নেন।
সে সময় তারা 'শপখ শপথ শপথ চাই, ইশরাক ভাইয়ের শপথ চাই', 'মেয়র নিয়ে তালবাহানা, সহ্য করা হবে না’, 'চলছে লড়াই চলবে, ইশরাক ভাই লড়বে’, 'নগর পিতা ইশরাক ভাই, আমরা তোমার ভুলি নাই' ইত্যাদি স্লোগান ধরেন।
ফলে নগর ভবনের সামনের সড়ক বন্ধ হয়ে যায়, এতে ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। ইশরাক সমর্থকদের অবস্থানের কারণে হাইকোর্ট মোড় থেকে গুলিস্তানমুখী সড়কে গাড়ির দীর্ঘ সারি তৈরি হতে দেখা গেছে।
গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে ইশরাক সমর্থক ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। টানা আন্দোলন ও কর্মসূচির কারণে সিটি করপোরেশনের সব ধরনের কার্যক্রম কার্যত বন্ধ আছে। এ জন্য নাগরিক সেবায় যে ধরনের ভোগান্তি তৈরি হয়েছে, যার দায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ওপর দিয়েছেন ইশরাক সমর্থকরা।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ট্রেড লাইসেন্স করাতে এসে কাজ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আজিমপুরের রজ্জব আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এক দিকে এখানে আসতে অনেক সময় লেগেছে, রিকশা নিয়ে ঢাকা মেডিকেলেরর পরে আর সামনে যাওয়ার উপায় নাই, পরে হেঁটে নগর ভবনে এসেছি। এসে দেখি সামনে আন্দোলন আর নগর ভবনের সবজায়গায় তালা দেওয়া, কি সমস্যায় পড়েছি বলুন। এখাবে আর কয় দিন থাকবে। কে মেয়র হবে সেটা আমাদের জানা দরকার নাই। আমাদের মত সাধারণ নাগরিকদের সেবা তো খোলা রাখবে।"
ইশরাকের সমর্থনে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া জাফর আহমেদ এই ঘটনার জন্য স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাকে দায়ী করেছেন।
তিনি বলেন, "আদালত থেকে দুই দফা রায় আসার পরও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়ার ইচ্ছাকৃত দেরি ও প্রশাসনিক টালবাহানার কারণেই দায়িত্ব হস্তান্তর আটকে আছে। আমরা মেয়র বসা পর্যন্ত আছি, রাস্তা ছাড়ব না।"
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।
এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয় সেজন্য গত ১৪ মে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ।
এমন পরিস্থিতিতে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে ইশরাক সমর্থকরা লাগাতার আন্দোলনে নামলেও আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এক ফেইসবুক পোস্টে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করেন ইশরাক। তার সমর্থকরাও একই দাবি তোলেন।
বৃহস্পতিবার ইশরাককে মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে করা রিট মামলা খারিজ করে দেওয়ার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কী উদ্যোগ নেয় তা পর্যবেক্ষণের জন্য ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে সেদিন আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিলেন ইশরাক।
সে সময় শেষ হওয়ার পর ইশরাকের সমর্থকরা শনিবার থেকে ফের নগর ভবনে অবস্থান নিয়েছেন।
এরপর ইশরাকের শপথ আটকাতে সোমবার আপিল বিভাগে যান রিটকারী আইনজীবী মামুনুর রশিদ। বিএনপির এই নেতাকে মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিট আবেদন খারিজের যে আদেশ হাই কোর্ট দিয়েছে, তা স্থগিত চেয়ে সোমবার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন তিনি।
একই দিনে শপথ নেওয়াতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে ‘তাগিদ নোটিশ’ পাঠিয়েছেন ইশরাক হোসেনের আইনজীবী মাহাবুব উদ্দীন খোকন।
ইশরাকের শপথ: আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় সরকার