Published : 28 May 2025, 01:57 PM
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে এক তরুণীকে চীনে পাচারের চেষ্টার সময় মানবপাচার চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-এপিবিএন।
তাদের মধ্যে দুই চীনা নাগরিক হলেন- হুন ঝুনঝুন (৩০) ও ঝ্যাং লেইজি (৫৪) এবং অপরজন বাংলাদেশের মো. নয়ন আলি (৩০)।
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিমানবন্দর এপিবিএন জানিয়েছে, সোমবার রাতে বিমানবন্দর থেকে দুই চীনা নাগরিককে এবং বাংলাদেশের নয়নকে বসুন্ধরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এপিবিএনের পুলিশ সুপার (অপারেশন্স) মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে এপিবিনের মাধ্যমে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মানবপাচারের অপরাধে চীনা নাগরিক আটকের এটি দ্বিতীয় ঘটনা।”
বিজ্ঞপ্তিতে এপিবিএন বলছে, গাইবান্ধা জেলার ১৯ বছর বয়সী ভুক্তভোগী ওই তরুণীর মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি প্রথমে তাদের নজরে আসে।
“ওই তরুণীকে বিমানবন্দর দিয়ে পাচারকালে তিনি বিমানবন্দরের মূল প্রবেশপথ গোলচত্বর এলাকায় এপিবিএনের কাছে দুই চীনা নাগরিকের বিরুদ্ধে তাকে পাচারের অভিযোগ করেন।
“অভিযোগ পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার ফাউজুল কবীর মঈন ও তার দলের সদস্যরা ওই চীনা নাগরিকদের আটক করে বিমানবন্দর এপিবিএন অফিসে নিয়ে আসেন।“
অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদে ও ভুক্তভোগীর দেওয়া তথ্য থেকে এপিবিএন জেনেছে, রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি বাড়িতে আরও দেশি-বিদেশি পাচারকারী ও নারী ভুক্তভোগীরা আছেন।
এরপর এপিবিএনের একটি দল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সেই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পাচারকারী চক্রের বাংলাদেশি সদস্য নয়ন আলিকে আটক করে। ওই সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাকিরা ‘পালিয়ে যায়’ বলে এপিবিএনের ভাষ্য।
এসময় পুলিশ পাচারকারী চক্রের গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করেছে বলেও ভাষ্য এপিবিএন।
এপিবিএন প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে মানবপাচারের সাথে জড়িত আছে। চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টাও চালমান আছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
এপিবিএন বলছে, “ওই দুই চীনা একবছর আগে বাংলাদেশে আসেন। তারা দুজনেই বসুন্ধরা এলাকায় বসবাস করতেন এবং তারা দেশীয় দালালদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
“তাদের একজন নয়ন আলির সহযোগিতায় ওই তরুণীকে বিয়ে করার জন্য বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখাতে থাকেন তারা। এবং ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে করার জন্য রাজিও করায়।“
মেয়েটির ভুয়া ঠিকানা দিয়ে পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি করে। এরপর গেল মার্চ মাসে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে ঝুনঝুনের সাথে ওই তরুণীর বিয়ে হয়। বিয়ের কাজে বাকি দুজন সহায়তা করে। ওই তরুণীকে না জানিয়ে তাকে চীনে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের (বিএস ৩২৫) টিকেটও বুক করে। পরে শাহ্জালাল বিমানবন্দরে নিয়ে আসলে ভুক্তভোগীর মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বিমানবন্দর এপিবিএন তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।“
এ ঘটনায় বুধবার ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেছেন।
এপিবিএনের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক তিনি বলেন, “আমরা লক্ষ করছি, বেশ কিছু মানবপাচারকারী চক্র স্থানীয় দালালদের সহযোগীতায় নারী পাচারের চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা মূলত গ্রামের সহজ-সরল ও দরিদ্র পরিবারের নারীদের টার্গেট করে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে চীনে পাচার করার চেষ্টা করে। গোপন তথ্য বা অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করি।"
গেল ১০ ডিসেম্বর একই ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে দুই চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছিল এপিবিএন।