Published : 30 Apr 2024, 10:18 PM
শ্রম আইনে যে সংশোধনী আনা হচ্ছে তাতে অধিকার লঙ্ঘনে জরিমানা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
এছাড়া সব কারখানায় ১৫ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতিতে ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগও রাখা হচ্ছে।
গত নভেম্বরে একাদশ সংসদের শেষ অধিবেশনে পাস হওয়া ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল ২০২৩’ রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে ফেরত আসে। ফেরত আসার কারণ হিসেবে গত ডিসেম্বরে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘মুদ্রণজনিত ভুল’।
ওই সংশোধনীতে শ্রমিকদের বেআইনি ধর্মঘটের ক্ষেত্রে জরিমানা ৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়। কিন্তু মালিকদের ক্ষেত্রে জরিমানা আগের মতই ৫ হাজার টাকা রাখা হয়। সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিলটি ফেরত পাঠান রাষ্ট্রপ্রধান।
এবার সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে জরিমানা বাড়ানোর কথা বলছেন আইনমন্ত্রী।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী।
আইনে কারখানা মালিকদের সাজা বাড়ছে কীনা জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, “কারখানা মালিকদের সাজা বাড়ছে বিষয়টা এমন না। যারা অধিকার লঙ্ঘন করবে তাদের সাজা বাড়ানো হচ্ছে। আইনে অধিকার লঙ্ঘনের সাজার একটা ধারা আছে। যেখানে জরিমানা ৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ২০ হাজার বা ২৫ হাজার টাকা হতে পারে।”
সভায় আইএলওর পরামর্শ কী ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তাদের একটি পরামর্শ হচ্ছে থ্রেশহোল্ড (ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে শ্রমিকদের সম্মতির হার) কমিয়ে আনা। আমরা আগে এই থ্রেশহোল্ড ২০ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছিলাম। কিন্তু সেটা যে কারখানায় তিন হাজার বা তার চেয়ে বেশি শ্রমিক আছে, তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়ার কথা।
“এখন সব কারখানার জন্য ১৫ শতাংশ থ্রেশহোল্ড রাখা হয়েছে। অর্থাৎ ১৫ শতাংশ শ্রমিকরা রাজি হলেই তারা একটি ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে পারবে। আইএলওর এই পরামর্শ মেনে নিয়ে তা সংশোধিত শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”
আইনমন্ত্রী বলেন, “আপনারা জানেন আমরা আমাদের শ্রম আইনটা সংশোধন করছি। এটা আগেও সংশোধিত হয়েছিল গত সংসদে। এটা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়ার পর দেখা যায় কিছু ত্রুটি রয়ে গেছে। সেজন্য আবার নিয়ে আসা হয়েছে। এই আইন যখন করা হয় তখন সারা বিশ্বের বেস্ট প্রাকটিসগুলো আমরা এতে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছি। এখানে কিন্তু আইএলওর একটা কন্ট্রিবিউশন আছে।
“পাশাপাশি আইএলওর যে গভর্নিং বডিতে বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকার নিয়ে কিছু দেশ নালিশ করেছিল ২০১৯ সালে। সেই নালিশের পরে আমরা বহুবার আইএলওর গভর্নিং বডির মিটিঙে বলেছি শ্রমিকদের অধিকার আমাদের দেশে শুধু রক্ষাই হয়নি, আরও সুদৃঢ় হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের বিরুদ্ধে যে অহেতুক নালিশ করা হয়েছে সেটার একটা সমাপ্তি হওযা উচিৎ। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এবং আমাদের এই শ্রম আইন নিয়ে কথা বলার জন্য আমরা তাদের সঙ্গে বসেছিলাম। শ্রম আইনটা যতক্ষণ পর্যন্ত সংশোধন না হবে ততক্ষণ আমরা সব স্টেক হোল্ডার ও আন্তর্জাতিক যেসব শ্রমিক সংগঠন আছে তাদের কথা শুনব।”
গত বছরের ২৯ অক্টোবর একাদশ সংসদের শেষ অধিবেশনে বাংলাদেশ শ্রম আইনের বেশ কয়েকটি ধারায় সংশোধন এনে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল, ২০২৩’ উত্থাপন করা হয়। পরে মাত্র তিন দিনের সময় দিয়ে সংসদে রিপোর্ট উপস্থাপনের জন্য
বিলটি সংসদীয় কমিটিতে পাঠনো হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ২ নভেম্বর বিলটি সংসদে পাস হয়।
বিলটি পাসের পর আইনে পরিণত করার বাধ্যবাধকতার অংশ হিসেবে ৮ নভেম্বর তা রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু সম্মতি না দিয়ে সংবিধানের ৮০ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুযায়ী ২০ নভেম্বর তা সংসদে ফেরত দেন রাষ্ট্রপতি। বিলটি তামাদি হয়ে যাওয়ায় সেটিকে এখন নতুন করে সংসদে তুলতে হবে।
২০০৬ সালের শ্রম আইনে দুটি উপধারায় বেআইনি শ্রমিক ধর্মঘট এবং মালিকপক্ষের বেআইনি লকআউটের ক্ষেত্রে যে শাস্তি ছিল, তার কিছুটা সংশোধন করার প্রস্তাব করা হয়। ওই আইনে কোনো শ্রমিক কোনো বেআইনি ধর্মঘট করলে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড, অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। কোনো মালিকও কোনো বেআইনি লকআউট করলে
ঠিক একই শাস্তির মুখোমুখি হবেন বলে আইনি বিধান করা হয়।
তবে নভেম্বরে যে সংশোধনী প্রস্তাব সংসদে পাস হয়, সেখানে শ্রমিকদের বেআইনি ধর্মঘটের ক্ষেত্রে জরিমানা ৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়। কিন্তু মালিকদের ক্ষেত্রে জরিমানা আগের মতই ৫ হাজার টাকা রাখা হয়।
সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিলটি ফেরত পাঠান রাষ্ট্রপ্রধান।
মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বাংলাদেশে আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর তুওমো পাউটিয়াইনেন, সিনিয়র অ্যাডভাইজার অন স্ট্যান্ডার্ড পলিসি টিম ডে মেয়ার, টেকনিক্যাল অফিসার চয়নিচ থামপারিপাত্র, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মো. সাইদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শ্রম আইন সংশোধনে তাড়াহুড়ো না করতে বলেছে আইএলও: আনিসুল হক
‘মুদ্রণজনিত ভুলে’ ফেরত আসে শ্রমআইন: আইনমন্ত্রী
বিভ্রান্তির শঙ্কায় শ্রম বিল ফেরত পাঠালেন রাষ্ট্রপতি