Published : 27 May 2025, 01:21 PM
সরকারি চাকরি আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ জারির প্রতিবাদে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সচিবালয়ের ভেতরে বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
মঙ্গলবার আন্দোলনের চতুর্থ দিনে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের প্রধান ফটকে বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াটও মোতায়েন রয়েছে।
এদিন সচিবালয়ে দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। ফলে দুপুর পর্যন্ত সেখানে গণমাধ্যমকর্মীরাও প্রবেশ করতে পারেননি।
সচিবালয়ের ভেতরে থাকা কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল থেকে তারা মিছিল করছেন। পরে সচিবালয়ের নতুন ভবনের নিচে জড়ো হয়ে অবস্থান নিয়েছেন।
এদিকে বেলা ১১টার কিছু পরে বিএনপি সমর্থিত বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি এ বি এম আব্দুস সাত্তার গাড়ি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে গেলে নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে ঘুরিয়ে দেন।
পরে তিনি বলেন, “সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা কালো আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছে। আমরা ঐক্য ফোরামের পক্ষ থেকে সমর্থন জানিয়েছি। ক্ষোভের সঙ্গে জানাচ্ছি, সরকারের উচ্চ মহল থেকে আমার প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আমি তো আন্দোলন করছি না, নৈতিক সমর্থন দিয়েছি। সরকার যেই ধরনের আইন করছে এটা ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলেও ছিল না।
“আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট কর্মকর্তারা এখনও প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে বসে আছে, কেন? তাদের থাকার তো কোনো নৈতিক অধিকার নেই। তারা সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য এই ধরনের আইন করছে। এটা কালো আইন, এই আইনে যেকোনো সরকারি কর্মকর্তাকে সরকার বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করতে পারবে।"
সচিবালয়ের ভেতরে আন্দোলন করছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এই মোর্চার একজন সমর্থক বলেছেন, তারা সকাল থেকে ভেতরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
তাদের একজন বলেন, “কিছুক্ষণের মধ্যে ছবি ভিডিও পাঠাচ্ছি।”
এদিকে ‘সচিবালয় ও এনবিআরসহ প্রশাসনের সব স্তর থেকে দুর্নীতিবাস ও ফ্যাসিবাদের আমলাদের উৎখাতে ফ্যাসিবাদ উৎখাতযাত্রা’ নামের একটি কর্মসূচি নিয়ে সোমবার মধ্য রাত থেকে সচিবালয়ের উল্টো দিকে ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তন সংলগ্ন ফুটপাথে অবস্থান নিয়েছে জুলাই মঞ্চ নামের একটি সংগঠন। জুলাই মঞ্চ আওয়ামী লীগের চরম দোসর হিসাবে ৪৪ জন আমলার নামের তালিকা ছবিসহ প্রকাশ করে সেখানে প্রদর্শন করছে এবং তাদেরকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে।
এক পর্যায়ে জুলাই মঞ্চের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম তালুকদার, মুখপাত্র সাকিব হোসাইন ও মুখ্য সংগঠক অর্নব হোসাইনকে পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা করতে দেখা যায়। এই মঞ্চের কর্মী তাসমিয়া রহমান ও সুরাইয়া আন্তাও তর্কে যোগ দিলে অন্যরা তাদেরকে থামিয়ে দেন।
পরে সিদ্ধান্ত হয় লাউড স্পিকার (মাইক) ব্যবহার না করেই মঞ্চের কর্মীরা সেখানে অবস্থান করবেন।
আরিফুল ইসলাম তালুকদার বলেন, “গতকাল আমলারা আন্দোলন শুরু করেছে বিধায় আমরা এখানে বসেছি বিষয়টা এমন নয়। গত ফেব্রুয়ারি থেকে আমরা এমন দাবি জানিয়ে আসছি। গত শুক্রবারে দেওয়া আল্টিমেটামের ভিত্তিতে আমরা এখানে এসেছি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এখানে এসে ফ্যাসিবাদী আমলাদের অপসারণের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না দেওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে বসে থাকবো। কোনো ১৪৪ ধারা কিংবা ২৮৮ ধারার কথা আমাদের শুনিয়ে লাভ নেই।”
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদ সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে জারি করার প্রস্তাবে সায় দেয়।
এর প্রতিবাদে শনিবার সকাল থেকে দিনভর সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তাদের আপত্তির মধ্যেই রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে রোববার রাতে অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
এতে পুরোনো আইনের সঙ্গে ’৩৭ক’ নামের আরেকটি ধারা সংযোজন করা হয়।
নতুন ধারায় একজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে দুই দফায় সাত দিন করে নোটিসের পর দায়ী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা রাখার বিধান রাখা হয়েছে।
অধ্যাদেশে ‘আচরণ বা দণ্ড সংক্রান্ত’ বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে-
>> কেউ যদি এমন কাজ করে যা অনানুগত্যের সামিল এবং যা অন্য কর্মচারীদের মাঝে অনানুগত্য সৃষ্টি করতে পারে বা শৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটাতে পারে বা অন্যের কর্তব্য পালনে বাধার সৃষ্টি করতে পারে;
>> এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে ছুটি ব্যতীত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে। কাউকে কর্মবিরতিতে বাধ্য বা উস্কানি দেওয়া, অন্য কর্মচারীকে কাজে বাধা দেওয়া হলে;
>> কোনো কর্মচারীকে তার কর্মস্থলে আসতে বা কাজ করতে বাধা দেওয়া হলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হবে।
এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে পদাবনতি বা গ্রেড অবনতি, চাকরি থেকে অপসারণ কিংবা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিধান রাখা হয়েছে।
এসব অসদাচরণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ গঠন, সাত দিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারণ জানিয়ে জবাব না দিলে আবার সাত দিনের নোটিস দেওয়ার পর তা বিবেচনা করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।
তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর আপিল রাখার সুযোগ রয়েছে। দণ্ডের নোটিস হাতে পাওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করা যাবে।
নতুন এই অধ্যাদেশকে আন্দোলনকারীরা বলছেন ‘নিবর্তনমূলক কালো আইন’।
এ আইন করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সরকার প্রয়োজন মনে করছে বলেই এ আইন করছে।
কর্মচারীদের নেতা মোজাহিদুল ইসলাম বলেছিলেন, “জনপ্রশাসন সচিব তাদেরকে অন্ধকারে রেখে নিজে আইন মন্ত্রণালয়ে বসে এমন অধ্যাদেশ প্রস্তুত করেছেন। কয়েকজন উপদেষ্টা আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত তারা অধ্যাদেশ জারি করেই ছেড়েছেন, কথা রাখেননি।”
দিনভর বিক্ষোভে অচল সচিবালয়, সরকার নিশ্চুপ
বিক্ষোভের মধ্যেই সরকারি চাকরি আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ জারি
সরকারি চাকরি আইন সংশোধন: সচিবালয়ে দ্বিতীয় দিনের মত বিক্ষোভ
সচিবালয়ে বিক্ষোভ: আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, বললেন স্বরাষ্ট
সচিবালয়ের কর্মচারীরা বললেন, অধ্যাদেশ বাতিল না হলে আন্দোলন চলবেই
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভ