Published : 23 Jul 2024, 10:59 PM
ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্যাস-বিদ্যুতের বিল পরিশোধ, বিশেষ করে যাদের প্রিপেইড মিটার, তারা কার্ড রিচার্জ করতে ভোগান্তিতে পড়েছেন।
উদ্বেগ উৎকণ্ঠা নিয়ে গ্রাহকরা যখন এদিক-সেদিক ছুটোছুটি করছিলেন; তখনই সংশ্লিষ্ট সরকারি কোম্পানিগুলো বিকল্প ব্যবস্থায় সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজেন। কিন্তু হাজার হাজার গ্রাহকের চাপ সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে কর্মকর্তাদেরও।
সময় মত বিল পরিশোধ কিংবা কার্ড রিচার্জ করতে না পারায় কয়েকদিন বিদ্যুৎবিহীন থাকার ঘটনাও অনেক।
দেশে তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিকায়নের কারণে গ্যাস, বিদ্যুতের গ্রাহকরা বিল পরিশোধে ডিজিটাল পেইমেন্ট সুবিধা ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। ব্যাংকে লাইন না ধরে ঘরে বসেই টাকা পরিশোধ করে সংযোগ সচল রাখা যাচ্ছিল।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশে চলমান সংঘাত সহিংসতার প্রেক্ষাপটে গত ১৭ জুলাই রাত থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় মোবাইল ইন্টারনেট। আর পরদিন বৃহস্পতিবার মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ভবনে অগ্নিসংযোগের পর সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওইদিন সন্ধ্যার পর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ হয়ে যায়।
এই দুই ঘটনার পর ব্যাংক, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ও অন্যান্য ডিজিটাল পেইমেন্ট সেবার অ্যাপগুলো অকার্যকর হয়ে যায়। একমাত্র মোবাইল ছাড়া তথ্য আদানপ্রদানের অন্যান্য পথগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্রাহকদের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়তে থাকে।
নিয়ম অনুযায়ী শুক্র ও শনিবার সপ্তাহিক ছুটির কারণে প্রিপেইড মিটারের বিদ্যুৎ গ্রাহকরা বিশেষ ব্যবস্থায় সেবা পাচ্ছিলেন। রোববার থেকে যেসব গ্রাহকের ব্যালেন্স শেষ হয়েছে তারা একে একে সংযোগ হারাতে থাকেন। আর কারফিউ ও সাধারণ ছুটির কারণে আঞ্চলিক অফিসে গিয়ে সমস্যার সামাধানও কঠিন হয়ে পড়ে।
রোববার ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির মোহাম্মদপুর সাতমসজিদ নেটওয়ার্ক অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করে গ্রাহক নিগার সুলতানা বলেন, “গত রাত ১২টার সময় বিদ্যুৎ মিটারের টাকা শেষ হয়ে বাসার বিদ্যুৎ চলে গেছে। বিকাশ থেকে চেষ্টা করেও রিচার্জ করতে পারলাম না। বাসায় মা অসুস্থ, ছোট ছোট বাচ্চাকাচ্চারা আছে। গরমের মধ্যে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় মা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
“সকাল ৯টার দিকে কার্ড রিচার্জ করতে এসে দেখি আমার সামনে আরও ৪০/৫০ জন দাঁড়িয়ে আছেন। তিন ঘণ্টা রোদে অপেক্ষা করার পর ডিপিডিসি লোন হিসাবে মাত্র এক হাজার টাকা দিয়েছে। রিচার্জ করা যায়নি। এই টাকায় আমার কতদিন চলবে?”
সুলতানার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছে তখন গ্রাহকের লাইন আরো দীর্ঘ হয়েছে।
শ্যামলীতে ডিপিডিসির আরেকটি আঞ্চলিক অফিসে গ্রাহক জোনায়েদ কবির বলেন, “রোববার রাতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর সকালেই পানি শেষ হয়ে গেল। সাত তলা ভবনের ১৮টি ফ্ল্যাটে অন্তত ৭০ জন বাসিন্দা সারাদিন পানি-বিদ্যুৎহীন। রিচার্জের জন্য প্রায় তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে জানতে পারলাম, রিচার্জ হবে না। তারা পাঁচ হাজার টাকা লোন দিয়ে দিল। এই টাকায় সর্বোচ্চ ১৫ দিন চলবে।”
রোববার রাতে নোয়াখালীর সোনাপুর পৌরসভার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, “দেশে কারফিউ জারি হলো আর আমাদের বাসার বিদ্যুতের মিটারেও টাকা শেষ হয়ে গেল। সকালে পিডিবি অফিসে যাওয়ার পর তারা বলল- এখানে হবে না, এনসিসি ব্যাংকে যান। এনসিসি ব্যাংকে গেলে তারা বলল, সার্ভার কাজ করছে না। পরে আবার আসলাম পিডিবি অফিসে। এবার তারা কিছু ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স দিয়ে দিল।”
বিদ্যুৎ বিভাগের বিশেষ উদ্যোগ
বিদ্যুতের সংযোগ সচল রাখতে শুরুতে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসগুলোর ইউএসএসডি শর্ট কোড ব্যবহার করে প্রিপেইড মিটারে রিচার্জ করতে বলা হয়।
গ্রামীণ ফোন থেকে *৭৭৭#, বিকাশ থেকে *২৪৭#, নগদ থেকে *১৬৭# এবং ইউপে থেকে *২৬৮# ডায়াল করে টাকা রিচার্জ করতে অনুরোধ করা হয়। অবশ্য এসব পদ্ধতি অবলম্বন করতে গিয়েও বিড়ম্বনায় পড়েন অনেক অনভিজ্ঞ গ্রাহক।
ডিপিডিসির প্রিপেইড মিটার গ্রাহকদের জন্য ১৬১১৬ নম্বরে ডায়াল করে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
ডেসকোর পক্ষ থেকে সব ধরনের মিটারের জন্য ০০ অথবা ৮১১ ডায়াল করে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। অন্যান্য স্মার্ট মিটারগুলো কার্ড ইনসার্ট করে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
আর গ্যাসের প্রি পেইড মিটার গ্রাহকদের জন্য ‘বি’ বাটন ৫ সেকেন্ড চেপে ছেড়ে দিয়ে সাথে সাথে ‘এ’ বাটন চাপতে বলা হয়।
ডিপিডিসি ও ডেসকোর সিঙ্গেল ফেইজ গ্রাহকরা ৩০০০ টাকা এবং থ্রি ফেইজ গ্রাহকরা ৫০০০ টাকা করে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স পেয়েছেন।
বিদ্যুতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
এদিকে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিএনপি জামায়াতের সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে গত কয়েকদিনে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সন্ত্রাসীরা টঙ্গীর চেরাগআলী উপকেন্দ্র, কাজলা বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, জাপান গার্ডেন সিটি উপকেন্দ্র, আজিমপুর উপকেন্দ্র, চর সৈয়দপুর বিদ্যুৎ অফিসে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ চালিয়েছে।
এছাড়া নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১, জোনাল অফিস, মাদারীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর অফিস ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।