Published : 26 May 2025, 08:49 PM
বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব ভাতা বাড়ানো হয়েছে৷
এখন শিক্ষকরা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ উৎসব ভাতা পাবেন।
২০০৪ সাল থেকে তারা মূল বেতনের ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা পেয়ে আসছিলেন।
তবে এমপিওভুক্ত কর্মচারী যারা মূলবেতনের ৫০ শতাংশ উৎসব ভাতা পাচ্ছেন, তাদেরটা বাড়ানো হয়নি।
সোমবার এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের উৎসব ভাতা বাড়িয়ে আদেশ জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
আদেশটি অর্থ বিভাগ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিবকে পাঠানো হয়েছে।
অর্থ বিভাগের প্রবিধি অনুবিভাগের উপসচিব মোসা. শরীফুন্নেসা সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষকদের উৎসব ভাতা মূলবেতনের ২৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশে বাড়ানো হয়েছে। তবে এমপিওভুক্ত কর্মচারীদের আগের হারে অর্থাৎ মূলবেতনের ৫০ শতাংশ বহাল আছে।”
আদেশে অর্থ বিভাগ বলছে, “প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ জারির তারিখ থেকে এ ভাতা কার্যকর হবে।”
গত ২১ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বেসরকারি স্কুল-কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব ভাতা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে মূল বেতনের ৫০ ও কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করার প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে পাঠায়।
শিক্ষক ও কর্মচারীদের বর্ধিত হারে উৎসব ভাতা দিতে ২২৯ কোটি টাকা পুনঃউপযোজনের প্রস্তাব করা হয়। ওইদিনই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে প্রস্তাবটি অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়।
গত ৭ মে অর্থ বিভাগ ২২৯ কোটি টাকা পুনঃউপযোজনের সম্মতি দিলেও আদেশে শুধু শিক্ষকদের কথা উল্লেখ করে।
গত ১৮ মে দুপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসব ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করলেও অর্থ বিভাগের আদেশে শুধু শিক্ষকদের কথা উল্লেখ আছে।
“আমরা বিষয়টি সংশোধন করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছি,” বলেছিলেন তিনি।
এদিকে গত ১৩ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে এমপিওভুক্ত মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের উৎসব ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়েছিল।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী উভয়ের উৎসব ভাতা বাড়াতে টাকা পুনঃউপযোজনের সম্মতি দেওয়া হলেও কর্মচারীদের উৎসব ভাতা না বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে উপসচিব মোসা. শরীফুন্নেসা সুস্পষ্টভাবে কিছু বলতে পারেননি।
তিনি বলেন, “আমি ডেস্ক অফিসার হিসাবে বিষয়টি প্রক্রিয়া করেছি।”
এ বিষয়ে জানতে মহাপরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানের সঙ্গে সোমবার সন্ধ্যায় টেলিফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।
শিক্ষকরা খুশি, আন্দোলনের হুমকি কর্মচারীদের
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব ভাতা বাড়ানোয় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব দেলাওয়ার হোসেন আজীজী।
তবে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষকদের উৎসব ভাতা বাড়ানো হলো কর্মচারীদের আগের হারে রাখা হতাশার। তারা কম বেতন পান, তাই তাদের মূল বেতনের ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
“আগামী বাজেট থেকে সব শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতনের শতভাগ উৎসব ভাতা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।"
এদিকে এমপিওভুক্ত কর্মচারীদের উৎসব ভাতা না বাড়ানোর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী পরিষদ৷
এমপিওভুক্ত কর্মচারীদের এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান ওরফে আদনান হাবিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদুল আজহার আগে কর্মচারীদের উৎসব ভাতা না বাড়ালে আমরা কর্মবিরতিসহ কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলব। ইতোমধ্যে বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।”
শতভাগ উৎসবভাতা, সরকারি নিয়মে বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতা দেওয়া ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারিকরণের দাবি শিক্ষকদের আন্দোলনের মধ্যে গত ৫ মার্চ শেষ কর্মদিবসে শিক্ষক-কর্মচারীদের ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণা দেন তৎকালীন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
উপদেষ্টার এ বার্তা পাওয়ার পরদিন ৬ মার্চ ২২ দিনের আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষকরা।