Published : 03 Jun 2025, 01:06 PM
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, নিম্নকক্ষে নারী আসনসহ সংস্কার কমিশনগুলোর আরো কিছু সুপারিশ নিয়ে দেশের ৩০টি রাজনৈতিক দলের সাথে দ্বিতীয় দফার বৈঠক শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল মাল্টিপাস হলে রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকটি হচ্ছে।
কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ এই বৈঠকের সভাপতিত্ব করছেন।
বৈঠকে বিএনপির ইসমাইল জবিহউল্লাহ, জাতীয় গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস, খেলাফত মজলিসের আহমেদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, ন্যাশনাল রিপাবলিক পার্টির সারবিস আলম, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান, এলডিপির চৌধুরী হাসান সোহরাওয়ার্দী, বিএলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিমসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের নেতারা রয়েছেন।
এছাড়া ঐকমত্যে কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, আইয়ুর
মিয়া, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার সেখানে উপস্থিত আছেন।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার জানিয়েছেন, বৈঠকে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, নিম্নকক্ষে নারী আসন, বিচার ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা হবে কমিশনের সদস্যদের।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার আলোচনা শুরু করেছে সোমবার। সেদিন আলোচনার উদ্বোধন করেন কমিশনের সভাপতি, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রথম দিন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এলডিপি, এনসিপিসহ দেশের ২৮টি রাজনৈতিক দল ও দুটি জোটের নেতারা অংশ নেন।
কমিশনের প্রথম দফার আলোচনা শুরু হয়েছিল ২০ মার্চ এবং তা শেষ হয় ১৯ মে।
গণআন্দোলনে ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২০২৪ সালের অক্টোবরে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনগুলো ২০২৫ সালে ফেব্রুয়ারিতে তাদের সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করে।
পরে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে সরকার।
ঐকমত্য কমিশনের কাজ ও লক্ষ্য
বিভিন্ন সংস্কার সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্যে পৌঁছানো ও ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন করা এ ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য।
১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করা এ কমিশনকে ছয় মাস সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
ঐকমত্য কমিশন ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের প্রিন্ট কপি গত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠায়। এরপর ৫ মার্চ পাঁচটি কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে তাদের মতামতের জন্য পাঠানো হয়।
এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত সুপারিশ ছিল ৭০টি, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সুপারিশ ছিল ২০টি।
স্প্রেডশিট পাঠানোর পর ১৫ মার্চের মধ্যে মতামত দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ জানায় ঐকমত্য কমিশন। তবে কিছু দল সময় বাড়ানোর অনুরোধ করে। পরে মোট ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছ থেকে মতামত পাওয়া যায়। কিছু কিছু দল স্প্রেডশিটে মতামত দেওয়ার পাশাপাশি বিস্তারিত মন্তব্য ও বিশ্লেষণ জমা দেয়।
মতামত পাওয়ার পাশাপাশি ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার সুবিধার্থে কয়েকটি দলের সঙ্গে একাধিক দিনও বৈঠক চলে। আলোচনার মধ্য দিয়ে বেশ কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য ও আংশিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে আগে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল।