Published : 10 Aug 2023, 06:12 PM
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশা নিধনে মানুষকে সচেতন করতে পেরেছেন বলে দাবি করনে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, তা না হলে শুধু ঢাকায়ই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১০ লাখে পৌঁছত।
ডেঙ্গু সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ার মধ্যে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মশা নিধনে নিজের মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের ফিরিস্তি দেন তাজুল।
২০১৯ সালের পর ডেঙ্গু এবারই সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। হাসপাতালে যাওয়া রোগীর সংখ্যা এরই মধ্যে ৭৮ হাজার ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯৫৯ জনের হাসপাতালে যাওয়ার খবর এসেছে, যা এবছরে সর্বাধিক। মৃত্যুর সংখ্যা তিনশ ছাড়িয়ে গেছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বাধিক।
এইডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে যত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
দিন দিন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি হাসপাতালে চাপ ফেলায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলে আসছেন, মশা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হবে। আর মশা নিধনের কাজটি তাদের হাতে নেই।
মশা নিয়ন্ত্রণের কাজটি মূলত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়র অধীন সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ স্থানীয় কর্তৃপক্ষের। সেই কাজটি ঠিকভাবে হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এনিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, “পৃথিবীর ১৪৮টি দেশে (ডেঙ্গু) আক্রান্ত। প্রতি বছর সাত লাখ লোক মারা যায়। সারা পৃথিবীতে আক্রান্ত হচ্ছে, আমাদের দেশেও আক্রান্ত হচ্ছে।
“সবাই এটাকে মোকাবেলা করার জন্য কাজ করছে। আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত আছি। যদি আমাদের এই কার্যক্রমটা আন্তরিকভাবে করা না হত, আক্রান্তের সংখ্যা এই জায়গায় থাকত না।”
“আমরা যদি সচেতন না করতে পারতাম, তাহলে আজকে হয়ত ৫-১০ লাখ ঢাকা শহরে আক্রান্ত হয়ে যেত,” বলেন তিনি।
মানুষতে সচেতন করতে পেরেছেন বলে সংখ্যাটি এখনও লাখের কম রয়েছে বলে দাবি করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। তবে ডেঙ্গু নির্মূল করতে শতভাগ মানুষকে সচেতন করে তোলার উপর জোর দেন তিনি।
বছরের শুরু করে এ পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় ৬৮ হাজার, ইন্দোনেশিয়ায় ৬৩ হাজার, থাইল্যান্ডে ৪৬ হাজার, ফিলিপাইনে ৮০ হাজার, সিঙ্গাপুরে ৫ হাজার ২২১ জন, ভিয়েতনামে ৪৬ হাজার, শ্রীলংকায় ৫৬ হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে তথ্য দেন তাজুল।
তিনি বলেন, “এরাও তো চেষ্টা করে, সবাই চেষ্টা করছে, সবাই কাজ করছে। সিঙ্গাপুর তো অনেক বেশি পরিপক্ক। তারপরেও ৫০ লাখ লোকের দেশে ৫ হাজার ২২১ জন আক্রান্ত হয়েছে।”
মশা নিধনে সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়ার যে অভিযোগ কীটতত্ত্ববিদরা তুলেছেন, সে বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, “এটা একেবারেই ঠিক নয়। তারা যখন আমাদের সামনে কথা বলেন, এই কথাগুলো বলেন না।
“আগে থেকে কী ব্যবস্থা নেবে? আমরা জানুয়ারি মাসের পাঁচ তারিখে সভা করেছি। সেই সভাতে কীটতত্ত্ববিদরা উপস্থিত ছিলেন। তারা তো তখন এ ব্যাপারে আমাদের কোনো দুর্বলতা আছে বলে বলেননি। আমাদের কোনো পদক্ষেপে ঘাটতি আছে কি না, সেটাও বলেননি।”
মশা নিধনে যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তাজুল। বরং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশার বংশ বিস্তারের সময় বদলে পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে বলে মনে করেন তিনি।
তাজুল বলেন, “ক্লাইমেট চেঞ্জের কারণে এটা হচ্ছে। শুধু আমাদের দেশে নয়, আজকের (বৃহস্পতিবার) তথ্য হল, পৃথিবীর ১৪৮টি দেশে ডেঙ্গু মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে গিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে যে পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ ডেঙ্গু রোগের ঝুঁকিতে আছেন। তো আমরা আমাদের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার, সেগুলো নিয়েছি।”
মশা নিধনে মানুষের আরও সচেতনতার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “প্রত্যেকে প্রত্যেকের স্থাপনাগুলো পরিষ্কার করছেন না। যে সমস্ত লার্ভা আছে, যে সমস্ত ডিম আছে, সেগুলো যদি পরিষ্কার করে ফেলা হয়, তাহলে তো মশা থাকবে না অর্থাৎ সীমিত আকারে হয়ে যাবে।
“দুই কোটি মানুষের ঢাকা শহর। সারা বাংলাদেশের আউটার জেলাগুলোতে হয়ত এ প্রথম তারা আক্রান্ত হচ্ছে। সতর্কতার জন্য একটু সময় লাগতে পারে। কিন্তু ঢাকা শহরে তো আমি মনে করি সবাই সচেতন হয়ে যেতে পারি। এখানে সব শিক্ষিত লোকজন।”
ডেঙ্গু যেহেতু সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে, তাই দেশব্যাপী ‘অত্যন্ত দ্রুততার সাথে’ এখনই কাজ শুরুর জন্য বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পৌরসভার মেয়রদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী।