Published : 02 Dec 2023, 11:44 PM
পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে দুই যুগ আগে যে শান্তি চুক্তি হয়েছিল, তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য সরকারকেই দায়ী করছেন পাহাড়িদের নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা।
তিনি বলেছেন, “চুক্তির দুই পক্ষ কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দায় দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারে না। কিন্তু দায়বদ্ধতা প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ সরকারের। অর্থাৎ চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে সরকারকে।”
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে শনিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে আলোচনা সভায় কথা বলছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি, যাকে সবাই সন্তু লারমা নামেই চেনে।
এ সভার আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম।
সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের দিন প্রতিবছর আলোচনা সভার আলোচনা করা হয়, অনেক আলোচনা হয়; কিন্তু প্রতিবছরই আলোচনার বিষয় থাকে চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া নিয়ে।
“বিগত ছাব্বিশ বছর ধরে চুক্তির প্রধান বিষয়গুলো বাস্তবায়ন না হওয়া নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে অসন্তোষ চরমে উঠেছে।”
সেই শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী সন্তু লারমা বলেন, “আমি মনে করি, পার্বত্য অঞ্চলের জুম্ম জনগণ বিগত ২৬ বছর ধরে চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে আসছিল। কিন্তু আজকের এই পর্যায়ে তারা সেই আশা-আকাঙ্ক্ষা আমি মনে করি ভাবতে আর পারছে না। তারা হৃদয়ে আর ধারণ করতে পারছে না।
“তাদের মধ্যে যে বাস্তবতা, সেই বাস্তবতা হচ্ছে যে- মানুষের সম্মান, অধিকার নিয়ে এবং তার যে দায়দায়িত্ব সেটা তাদের মনে হচ্ছে যে আজকে পার্বত্য অঞ্চলের বুকে আবারও নতুন কিছু ভাবনার উদয় হচ্ছে।”
নৃগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রশ্নে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে রাজনৈতিক সংকটের শুরু সেই স্বাধীনতার পর থেকেই। ধীরে ধীরে তা একপর্যায়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। প্রায় আড়াই দশকের এই সংঘর্ষে বারবার পাহাড়ের বুক চিড়ে বয়ে গেছে রক্ত আর হিংসার ধারা।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) মধ্যে শান্তি চুক্তির মাধ্যমে সংঘাতের সেই অধ্যায়ের যবনিকা ঘটে। তবে দীর্ঘ সময়েও চুক্তির বেশির ভাগ বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে অভিযোগ করে আসছেন পাহাড়ি নেতারা।
সন্তু লারমা বলেন, “দেশের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সমাজ নিজেরা কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করতে না পারলেও এর (চুক্তির) পর্যালোচনা ও মূল্যায়নে কোনো ঘাটতি ছিল বলে আমি মনে করি না। তবে এদেশের গ্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক দলগুলোর ভূমিকা চোখে পড়ার মত একটা ভূমিকা- আমরা দেখিনি বা দেখতে পাচ্ছি না।”
মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, “বিভিন্ন গণমাধ্যমে চুক্তি বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হচ্ছে। তারা (সরকার) আসলে ঠকিয়ে উচ্ছ্বসিত। চুক্তি বাস্তবায়িত হয়েছে এটা মিথ্যাচার।
“চুক্তির অনেক কিছুই করা হয়েছে, কিন্তু চুক্তির মূল কাজটি করা হয়নি। চুক্তি বাস্তবায়নের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে।”
উন্নয়নের নামে পাহাড়ি এলাকায় হোটেল-মোটেলের জন্য জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।”
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গবেষণা করা অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, “শাসকগোষ্ঠীর সবাই চুক্তি বাস্তবায়ন না করার বিষয়ে এক। এবং তারা চুক্তির বিষয়টি ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।”
অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহ সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।