Published : 12 Mar 2022, 06:34 PM
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে 'আমাদের জীবন, আমাদের স্বাস্থ্য, আমাদের ভবিষ্যৎ' (ওএলএইচএফ) প্রকল্পের উদ্যোগে কিশোরী ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলার সদর উপজেলার রেইচাথলি স্বপ্নপুরী কমিউনিটি সেন্টারে 'টেকসহ আগামীর মূল শর্ত জেন্ডার সমতা' প্রতিপাদ্যে আয়োজন করা হয় বির্তক প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক পর্ব, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।
অনন্যা কল্যাণ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ডনাই প্রু নেলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে একেএসের প্রোগ্রাম পরিচালক দীনেন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, "নতুন প্রজন্মকে অধিকার সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করাই আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। নারী দিবসের যাত্রা শুরু হয়েছিলো নারীদের মুজুরি বৈষম্য ও সময় ঘন্টা নিয়ে। এখনো আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় যে সমস্ত বৈষম্যগুলো বিদ্যমান তার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীরাই ভুক্তভোগী। আর এই অবস্থার উত্তরণ প্রয়োজন।"
রেইছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহ্রী মার্মা বলেন, "পাহাড়ের মেয়েরা এমনিতেই অনেক কিছুতে পিছিয়ে আছে। তার মধ্যে সীমিত পরিসরে তারা যেটুকু মেধা ও প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়েছে, তা সত্যিই আমাদের আশান্বিত করে।"
অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে পরিবেশিত কবিতা আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশনা 'উপভোগ্য' হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কারিতাসের কর্মকর্তা রূপনা দাশ বলেন, "আমাদের সকলে উদ্দেশ্য হলো, পাহাড়ের সকল জাতিগোষ্ঠীর মানুষ মিলে একসাথে এগিয়ে যাওয়া। এই প্রকল্পের অন্যতম ভালো উদ্যোগ হচ্ছে, কিশোরী ক্লাব পরিচালনা।
"এটি কিশোরীদের নিজেদের মনের কথাগুলো বিনিময়, সাংস্কৃতিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খুব উপযুক্ত জায়গা। কারণ আমাদের মধ্যে চিন্তার পরিবর্তন আনাটা খুব জরুরি। কারণ চিন্তার পরিবর্তন না আসলে, দীর্ঘদিনের চলে আসা জেন্ডার অসমতার পরিবর্তন সম্ভব না "
তিনি বলেন, "আমরা সকলে মিলে নিজেদের চিন্তা ও চেতনার পরিবর্তন আনতে পারলেই সত্যিকারের সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণ করা সম্ভব। আর নারী দিবসের এই চেতনা শুধুমাত্র দিবস উদযাপনের মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। এই কথা ও উপলব্ধিগুলো প্রতিনিয়ত চর্চা করতে হবে। অসঙ্গতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে।"
নির্বাহী পরিচালক ডনাই প্রু নেলী বলেন, "আমরা কিশোরী ক্লাবের মাধ্যমে যে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেছি, সেটিকে জ্বালিয়ে রাখতে হবে নিজেদেরকেই। যদি সবাই মিলে এটাকে লালন ও ধারণ করতে পারি, তাহলেই আমরা এগিয়ে যেতে পারবো।
"পাহাড়ি মেয়েরা সাধারণত নিজস্ব ভাষায় কথা বলতে ও ভাব প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তারা যে এই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বাংলা ভাষায় নারীর অধিকার ও জেন্ডার নিয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে পেরেছে, এটাই অনেক আশাবাদের বিষয়। আমরা পক্ষপাতহীন একটা সমাজ চাই। সহিংসতা ও নির্যাতনমুক্ত পরিবেশে নারী তার অদম্য ইচ্ছায় এগিয়ে যাবে, তবে নারীর এই এগিয়ে যাওয়ার পথে পুরুষদের সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই।"
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থায়নে ও অনন্যা কল্যাণ সংগঠন আয়োজিত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চারটি কিশোরী ক্লাবের মধ্যে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে রেইছাথলি কিশোরী ক্লাব; রানার্স আপ হয়েছে উদলবনিয়া কিশোরী ক্লাব।
প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন রেইছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহ্রী মার্মা, সিনিয়র শিক্ষক রতন কান্তি নাথ এবং বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের মাস্টার ট্রেইনার সুমিত বণিক।
প্রোগ্রাম ফ্যাসিলিটেটর মার্গারেট ত্রিপুরার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর দীধিতি চাকমা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রোগ্রাম ডিরেক্টর দীনেন্দ্র ত্রিপুরা, সাংবাদিক কৌশিক দাশ, সাংবাদিক বাসুদেব বিশ্বাস প্রমুখ।