Published : 26 Apr 2011, 09:11 PM
বাংলাদেশ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অধিবাস। এদের মধ্যে বাঙালিরা বিপুলভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং শিক্ষা, সম্পদ ও রাজনৈতিক কর্তৃত্বের বিচারে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীগুলোর উপর ফেরাউনের ন্যায় জেঁকে বসার মত যথেষ্ট শক্তির অধিকারী। এই অন্যান্যদের মধ্যে তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ি অধিবাসীদের, বিশেষতঃ চাকমাদের সাথে আমাদের অর্থাৎ বাঙালিদের বিরোধ দীর্ঘ দিনের।
চাকমাদের মধ্যে অসন্তোষের উৎপত্তি পাকিস্তান আমলে বাঁধ নির্মাণ করা থেকে। কিন্তু যেহেতু আমরা বাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্তে সরকারের অংশীদার ছিলাম এবং যেহেতু আমরাই নির্মিত বাঁধের একচ্ছত্র সুফলভোগী, তাই সে অসন্তোষের দায় আমরা এড়াতে পারি না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই সে অসন্তোষের মীমাংসা তাদের সাথে আলোচনা করে এমনভাবে করে ফেলা দরকার ছিল যেন তারা সন্তুষ্ট হয়।
কিন্তু তাদের সাথে দূরত্ব বাড়তে থাকে তুচ্ছ ইস্যুতে। তারপর আসে ৮০'র দশক। সম্পূর্ণ কৃত্রিমভাবে, পরিকল্পিতভাবে তাদেরকে তাদের নিজবাসভূমে সংখ্যার জোরে পরাজিত করার জন্য বাঙালিদের সেখানে জমিজমা দিয়ে বসানো হয়। এতে আমরা বাঙালিরা তাদের সামনে ভাইয়ের পরিচয় নিয়ে দাঁড়াব—সে মুখটাও আর থাকল না। সময় চলার সাথে সাথে তা গুরুতর সমস্যারও সৃষ্টি করল। এখন অভিবাসী বাঙালিদের ওখান থেকে সরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়াও কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এরূপ পরিস্থিতিতে পাহাড়িদের সাথে সরকারে শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়। চাকমারা অস্ত্র পরিহার করে এবং বাঙালিদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে সম্মত হয়। এই চুক্তি আমাদের জন্য একটি বিরাট সৌভাগ্য। আমাদের আগ্রাসন এবং আমাদের দিক থেকে তাদেরকে দেয়া এত অবিচারের বিপরীতে তাদের এই চুক্তি স্বাক্ষর একটি স্বস্তির বিষয়।
তারপরও পাহাড়িদের আমরা স্বস্তিতে থাকতে দিতে নারাজ। এখন সময় হয়েছে চুক্তির সব ধারা নিষ্ঠার সাথে বাস্তবায়ন করা, কোনো ধারার অর্থ অপরিষ্কার থাকলে তা পাহাড়িদের স্বার্থের অনুকূলে ব্যাখ্যা দিয়ে হলেও তা বাস্তবায়ন করা এবং পাহাড়িদের সাথে বিরোধের স্থায়ী নিষ্পত্তি করা।
যেরূপ আচরণ আমরা যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতের নিকট থেকে প্রত্যাশা করি না, সেরূপ আচরণ আমরা চাকমাদের সাথে করতে পারি না।
[অন্যের সব নিয়ে নাও বলার চেয়ে অন্যকে সব দিয়ে দাও বলা বেশী নিরাপদ। কারণ কারও কাছ থেকে পাওনার পরিমাণের চেয়ে বেশী নিয়ে ফেলার মধ্যে বিপদ আছে; কিন্তু অন্যের পাওনার পরিমাণের চেয়ে তাকে বেশী দিয়ে ফেলার মধ্যে সে বিপদ নেই। আমার লেখায় ইতিহাস বদলাবে না, চাকমারা সব নিয়ে নিতেও পারবে না। তারপরও লিখলাম; কারণ আমরা নিরীহ জনগণ এক্ষেত্রে বাস্তবে কিছু দিতে ব্যর্থ হতে পারি, কিন্তু মনের পরিবর্তন ঘটাতে বা দেয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে অসুবিধা বা বাধা কোথায়।
সব পরিবর্তনই শুরু হয় মন থেকে।]