Published : 03 Jun 2025, 11:15 PM
এবারের প্রস্তাবিত বাজেট আইএমএফের ‘ফর্মুলা’ মেনে করা হয়েছে এবং এতে শিল্প খাত ‘ক্ষতির মুখে পড়বে’ বলে মনে করছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)।
বাজেট প্রতিক্রিয়া জানাতে মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সংগঠনটি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, ''বাজেটে রাজস্ব আহরণকে প্রধান লক্ষ্য করা হয়েছে। এ বাজেটে করপোরেট কর ও ব্যক্তিখাতের করের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভর করা হয়েছে।
“পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতার কারণে সরকারের রাজস্ব আয় কম। কিন্তু এটা যে বাড়বে, সে রকম কোনো দিকনির্দেশনা বাজেটে নেই। করজাল বাড়ানোর কোনো পদক্ষেপ আমরা এ বাজেটে দেখছি না।''
তিনি বলেন, ''বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানো, ব্যবসাবান্ধব হওয়া এবং কর্মসংস্থান বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও এসব লক্ষ্য অর্জন করাটা দুরূহ।''
বিসিআই সভাপতি বলেন, “উৎপাদন খাতের বড় শিল্পে কাঁচামালের ওপর ভ্যাট বাড়ানোয় উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। এর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কীভাবে কমাবে, আমি ঠিক জানি না।”
তিনি অভিযোগ করেন, ''সবকিছু আইএমএফের ফর্মুলা অনুযায়ী করা হয়েছে। আইএমএফের ফরমুলা ধরলে তো ইন্ডাস্ট্রি ক্ষতির মুখে পড়বে।”
বর্তমানে উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি; জ্বালানি সংকট রয়েছে; ব্যাংক ঋণের সুদহারও বেশি—এমন পরিস্থিতিতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা শিল্পগুলোর ওপরও কর ও শুল্ক বাড়ানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
''গার্মেন্টসহ রপ্তানিমুখী শিল্পের নগদ প্রণোদনা আস্তে আস্তে কমিয়ে আনা হচ্ছে। এর ফলে রপ্তানি খাত প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাবে,'' বলেন বিসিআই সভাপতি।
তিনি বলেন, ''কটন সুতা ও ম্যান মেইড ফাইবারের ওপর মূসক উৎপাদন পর্যায়ে প্রতি কেজিতে ৩ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৫ টাকা করা হয়েছে। বর্তমানে জ্বালানি সংকটের মধ্যে দেশীয় স্পিনিং মিলে এই মূসক বাড়ালে দেশি টেক্সটাইল ক্ষতির মুখে পড়বে এবং সুতা আমদানি নির্ভর হয়ে পড়বে।''
স্টিল শিল্পের কাঁচামালে কর ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ এবং সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামালে মূসক ৫ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করায় আবাসন ও নির্মাণ খাতের ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বলে বিসিআই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে টার্নওভার কর দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করায়, বিশেষ করে সিএমএসএমই (কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান) খাত বড় ধাক্কা খাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এই টার্নওভার কর বাড়ানোর বিষয় পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব করেন তিনি।
তিনি বলেন, ''ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের বিক্রির উপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা উদীয়মান, বিশেষ করে এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য একটি গুরুতর আঘাত হবে। এটি ৫ শতাংশ কমিয়ে আনা উচিত।''
তবে বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১২৫ কোটি টাকা এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিসিআই।
সংগঠনটি বলেছে, বাজেটে এসএমই খাতকে ফরমালাইজ ও ডিজিটাল ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর বিষয়টি বিসিআইয়ের সুপারিশের প্রতিফলন। এজন্য তারা অর্থ উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
বিসিআইয়ের দাবি, বাজেটে খাতভিত্তিক যেসব বরাদ্দ (স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো, জ্বালানি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি) রাখা হয়েছে, তা যেন যথাযথভাবে এবং পূর্ণমাত্রায় বাস্তবায়ন করা হয়।
সংগঠনটি বলছে, “বাজেটের বাস্তবায়নকে যেন নিবিড় কমপ্লায়েন্সের মধ্যে নিয়ে আসা হয়। কারণ বাজেট হল, প্রয়োজনের সময় ব্যয় হল না বা অর্থ পাওয়া গেল না, তাহলে এর সুফল অর্থনীতি ও জনগণ পাবেন না।''