Published : 31 May 2025, 08:38 PM
দেশে বালাইনাশক শিল্পের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে বিদেশে রপ্তানির সক্ষমতা গড়ে তুলতে তিন ধরনের সুবিধা চেয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।
তারা কাঁচামাল আমদানির উৎস উন্মুক্ত করা, সহযোগী রাসায়নিক আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার এবং অগ্রাধিকার খাত হিসেবে স্বল্পসুদে ব্যাংকঋণ ও রপ্তানিতে প্রণোদনার দাবি জানিয়েছেন।
শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে ‘আমদানি বিকল্প দেশীয় বালাইনাশক উৎপাদকদের বাধা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক কর্মশালায় এ খাতের উদ্যোক্তাদের তরফে এসব দাবি তুলে ধরা হয়।
তারা বলেন, কৃষিখাতের উৎপাদন খরচ কমাতে দেশি বালাইনাশক শিল্পের বিকাশ অত্যন্ত জরুরি। ওষুধ শিল্পের মতই বালাইনাশক খাতে দেশি উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
কর্মশালায় বাংলাদেশ অ্যাগ্রো-কেমিকেল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশের অ্যাগ্রো-কেমিকেল বাজারের আকার প্রায় ৭,৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সাতটি বহুজাতিক কোম্পানি ও আমদানিনির্ভর ট্রেডারদের নিয়ন্ত্রণে ৯৪ শতাংশের বেশি বাজার, যেখানে ১৭টি দেশি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ৬ শতাংশ বাজার।
অ্যাগ্রো-কেমিকেল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশি কোম্পানিগুলো যাতে প্রতিযোগিতামূলকভাবে সুলভ মূল্যে কাঁচামাল আমদানি করতে না পারে, সেজন্য বহুজাতিক কোম্পানির চাপ ও প্রভাবেই বালাইনাশকের কাঁচামাল আমদানিতে ‘সিঙ্গেল কান্ট্রি, সিঙ্গেল সোর্স’ নীতি চালু করেছে বালাইনাশক কারিগরি উপদেষ্টা কমিটি (পিটাক)। ফলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো নিজ নিজ দেশের কারখানা থেকে উচ্চমূল্যে কাঁচামাল সরবরাহ করে লাভবান হচ্ছে, আর দেশি কোম্পানিগুলো বিকল্প উৎস থাকার পরও তা ব্যবহার করতে পারছে না।
তার অভিযোগ, এসব বহুজাতিক কোম্পানিকে সুবিধা দিতে বিধিমালায় আইন লঙ্ঘন করে 'কান্ট্রি অব অরিজিন' শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে দেশি কোম্পানিগুলো যদি বিকল্প উৎস থেকে কাঁচামাল আনতে চায়, তাহলে তাদের ‘ফিল্ড ট্রায়ালসহ’ তিন থেকে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
পাশাপাশি তিনি রাসায়নিক আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার, স্বল্পসুদে ব্যাংকঋণ এবং রপ্তানিতে প্রণোদনা সুবিধা প্রদানের দাবি জানান। এসব সুযোগ পাওয়া গেলে আগামী তিন বছরের মধ্যেই দেশের চাহিদা পূরণ করে এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্য আমেরিকায় রপ্তানি সম্ভব হবে বলে আশা তার।
কর্মশালায় গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল করিম বলেন, সিঙ্গেল সোর্স বাধ্যবাধকতা, কাঁচামাল উৎপাদন নীতির অভাব, বেআইনিভাবে পেটেন্ট পণ্যে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ এবং বন্দরে খালাস জটিলতা– এসব কারণে দেশি বালাইনাশক উৎপাদকরা টিকতে পারছেন না। তিনি সিঙ্গেল সোর্স প্রথা বাতিল, পেটেন্ট আইন ও ফোর্স লাইসেন্সিং কার্যকর, পিটাক পুনর্গঠন এবং কাঁচামাল আমদানিতে এনওসি বাতিলের সুপারিশ করেন।
বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব জাকির হোসেন বলেন, যেকোনো মূল্যে বালাইনাশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে এবং ওষুধ শিল্প সমিতিও এতে সহায়তা করবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নাহিদ আফরোজ বলেন, এই খাতের বিকাশে উদ্যোক্তাদের যেসব প্রস্তাব এসেছে, সেগুলো কার্যকর করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।