Published : 05 Jun 2025, 06:01 PM
থমকে যাওয়া ‘ব্যাংক মার্জার’ প্রক্রিয়া এবার গতি পাচ্ছে নতুন আঙ্গিকে। আর্থিক সংকটে পড়া শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ইসলামী ব্যাংকিং নীতি অনুসরণ করেই এর কাঠামো তৈরি করা হবে। মোটামুটি সাড়ে তিন মাসের মধ্যে এ প্রক্রিয়া শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
এই পাঁচ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যানদের নিয়ে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বৈঠক করেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
সেখানে এসব ব্যাংকে একীভূত করার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন ওই বৈঠকে। এই পাঁচ ব্যাংক এক করেই নতুন ব্যাংক করার কথা ভাবছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করে একটি ব্যাংক করা হবে। তাতে ব্যাংকিং কার্যক্রম কোনো রকমের ঘাটতি হবে না। গ্রাহকরাও তাদের টাকা সময় মত ফেরত পাবেন। ইসলামিক মডেল অনুসরণ করেই এ ব্যাংক তৈরি করা হচ্ছে।”
এই পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে চারটির পরিচালনা পর্ষদ নিয়ন্ত্রণ করতেন শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী সাইফুল আলম, যাকে সবাই এস আলম নামেই চেনে।
আর এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বহু বছর ছিল নজরুল ইসলাম মজুমদারের নিয়ন্ত্রণে। নাসা গ্রুপের উদ্যোক্তা মজুমদারও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বের পাশাপাশি ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে বিএবির চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।
বুধবারের বৈঠকে যে আলোচনা হয়েছে, তাতে কোরবানির ঈদের পরপরই ব্যাংকগুলো একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তাতে সাড়ে তিন মাসের মত সময় লাগবে।
একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু হলে ব্যাংকগুলো সাময়িকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। বিদ্যমান বোর্ড সদস্য এবং বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি নতুন বোর্ড গঠন করা হবে।
পাঁচ ব্যাংক মিলে যে নতুন ব্যাংক তৈরি করা হবে, তার মোট খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে বৈঠকে। এসব ব্যাংকের সম্পদ এক করা হবে এবং যেসব সম্পদ লোকসানি, সেগুলো ব্যবস্থাপনা কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করা হবে।
তাছাড়া নতুন ব্যাংক চালু করার সময় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন নামে লাইসেন্স দেওয়া হবে। বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকেও মূলধন নেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
'ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫' আইনের আওতায় এই কার্যক্রম সারা হবে বলে জানিয়েছেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান। তিনি মনে করেন, একীভূত হলে এসব ব্যাংকে ‘এক ধরনের স্থিতিশীলতা’ আসবে।
এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় যেসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, তার সব এখন খেলাপি। তাতে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা নড়বড়ে হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন মান্নান।
তিনি বলেন, “একীভূত হওয়ার পর ব্যাংকটির শাখা বাড়বে। গ্রাহকসেবা আরো উন্নতি ঘটবে। একীভূত করার প্রক্রিয়ায় সরকারের কাছে যাবে এসব ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ। তারপর বিদেশি বিনিয়োগকারী খুঁজে আবার বেসরকারিকরণ হবে।”
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এর আগে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা হবে। সরকার সাময়িক সময় এসব ব্যাংক পরিচালনা করবে। মূলধন যোগানো, খেলাপি ঋণ কমানোসহ নানা ধরনের জটিল বিষয়গুলো সরকারের পক্ষ থেকে সমাধান করা হবে।
দুর্দশায় পড়া ব্যাংকগুলোকে টেনে তুলতে না পেরে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দুর্বল কয়েকটি ব্যাংককে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেজন্য কয়েকটি ব্যাংক প্রাথমিকভাবে চুক্তিবদ্ধও হয়েছিল। কিন্তু গতবছর অগাস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর সেই প্রক্রিয়া থামকে যায়।