Published : 24 Mar 2025, 08:31 PM
তারল্য সংকটে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ২৮ দিনের জন্য টাকা ধার বা রেপো নেওয়ার সুবিধা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
ঈদের ছুটির পর আগামী ১০ এপ্রিল থেকে এ সুবিধা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক নির্দেশনায় বলেছে, এখন শুধু ৭ ও ১৪ দিন মেয়াদি নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। ১০ এপ্রিলের পর থেকে এ নিলাম হবে সপ্তাহে একদিন মঙ্গলবার।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এ সিদ্ধান্তকে সঠিক বলেই মনে করছেন। তার মতে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনা উচিত।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ২৮ দিনের রেপো বন্ধ করায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আগের চাইতে তারল্য সহায়তা কম পাবে। তবে ৭ ও ১৪ দিনের রেপো চালু থাকায় সমস্যা হওয়ার কথা না।
“ব্যাংকের তারল্যের ব্যবস্থাপনা নিজেদেরকেই ব্যবস্থা করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীলতা যত কমিয়ে আনা সম্ভব ততই ভালো হবে।”
বাণিজ্যিক ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়লে স্বল্প মেয়াদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার নেয়, যা রেপো হিসেবে পরিচিত। এটির সুদহার ঠিক হয় রেপো বা রিপারচেজ অ্যাগ্রিমেন্টের মাধ্যমে।
অপরদিকে রিভার্স রেপোর মাধ্যমে (জুলাই থেকে যেটির নাম দেওয়া হয়েছে এসডিএফ) ব্যাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলে বাজার থেকে অতিরিক্ত তারল্য তুলে নিতে পারে।
এ দুই পদ্ধতিতে সরকারি সিকিউরিটিজ কেনাবেচার মাধ্যমে বাজারে টাকার সরবরাহে ভারসাম্য ধরে রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে শোনা যাচ্ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক দুই ধরনের রেপো বন্ধ করবে। প্রথম ধাপে মার্চে ২৮ দিনের ও জুনে ১৪ দিনের রেপো সুবিধা বন্ধের বিষয়ে ভাবছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
এতদিন ৭, ১৪ ও ২৮ দিনের রেপোর নিলাম চালু ছিল। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক রেপোর নিলাম সপ্তাহে দুইদিনের বদলে শুধু মঙ্গলবার করে। আগে সোমবারেও টাকা ধার নিতে পারত ব্যাংকগুলো।
মার্চে বন্ধ হচ্ছে ২৮ দিনের রেপো, 'জুনে ১৪ দিনের'
২৮ দিনের রেপো বন্ধের ব্যাখ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাংকগুলোর তারল্য দরকার পড়লে কলমানি থেকে ধার করবে। তাতে কলমানি বাজারটা শক্তিশালী হবে। কিন্তু আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো সেই চর্চা করছে না।”
তিনি বলেন, “আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো উল্টো চর্চা করছে। আন্তঃব্যাংক থেকে ধার করার চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ধার করছে বেশি।
“ব্যাংক যখন কলমানি কিংবা অন্য জায়গা থেকে টাকা ধার করতে পারবে না, অর্থাৎ একদম না পেরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আসবে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ কর্মকর্তা মনে করেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক মানি মার্কেট পর্যালোচনায় দেখেছে, ব্যাংকগুলো ১৪ ও ২৮ দিনের রেপোর মাধ্যমে টাকা ধার করে সেটা আবার ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করছে। এসব বন্ধ করা উচিত। কারণ বাণিজ্যিক ব্যাংক এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারে না। তাই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”